ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘মানুষ হলো পাখি, খাঁচা তার আকার’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
‘মানুষ হলো পাখি, খাঁচা তার আকার’ রশিদ বাউল। ছবি: বাংলানিউজ

কুষ্টিয়া: ‘সাঁইজির সবসময় তার গানের মধ্য দিয়ে মানবতার ও মানুষের কথা বলে গেছেন। মানুষের মধ্যে যে মানুষ বসবাস করে সেটাকে চেনার কথা বলেছেন। সদা সত্য বলা, সু-পথে চলার কথা বলেছেন। এই মানব জীবন আর হবে না; এটাকে চিনতে হবে বুঝতে হবে। সাঁইজির দর্শন বুকে ধারন করে চলতে হবে। তবেই তো মিলবে আত্মতৃপ্তি। মিলবে মুক্তির পথ। সাঁইজি তার গানের মথ্যেই আমাদের চলার পথ দেখিয়ে গিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) কথাগুলো কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন আঁখড়াবাড়ীর রশিদ বাউল নামে এক সাধুর।

আঁখড়াবাড়ীতে খেলাফতধারী সাধুরা তাদের ভক্তদের বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ্’র বিভিন্ন গানের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

ভক্তদের পাশাপাশি কৌতূহল বসত দর্শনার্থীরাও এসব গানের ব্যাখ্যা শুনছেন।

রশিদ বাউল ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র ‘খাচার ভিতর অচীন পাখি’ গানের কিছু অংশের তত্ত্ব।

রশিদ বাউল বলেন, সাঁইজি তার এ গানটি মূলত দেহতত্ত্ব নিয়ে লিখেছেন। আমরা যেটাকে চিনি না, দেখতে পারিনা সেটাই অচীন। মানবদেহের মধ্যেই এই পাখির বসবাস। পাখিটাকে তো কোনদিন দেখায় যায়নি তাহলে চিনবো কী করে। যদি দেখতাম তাহলে চিনতে পেতাম। এখানে কোন পাখি আর এই পাখিটা কোন খাঁচায় থাকে? পাখি হলো মানুষ আর মানুষের আকার হলো খাঁচা। মানুষের এই খাচার ভেতরে অচেনা পাখিটা বিরাজ করে। এই পাখিকে চেনা যায় না, দেখা যায় না। রশিদ বাউল।  ছবি: বাংলানিউজগানটির মাধ্যমে বলা হয়েছে ‘আট কুঠুরি নয় দরজা আঁটা, মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাটা’ এখানে সাঁইজি আট কুঠুরি বলতে আমাদের মানুষের দেহের আটটি অংশকে বুঝিয়েছেন। এর মধ্যে মাথার খুলি, ডান-বাম দুই ফুসফুস, হৃৎপিন্ড, পাকস্থলী, দুই কিডনি আর কোলন।   মানবদেহের এসব অঙ্গকে গানের মাধ্যমে আট কুঠুরির সঙ্গে তুলনা করেছেন সাঁইজি। আর নয় দরজা হলো চোখ, কান, নাক, পায়ু, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি।

এই গানের মাধ্যমে সাঁইজি তার আত্ম্যাধিক জ্ঞানের মাধ্যমে মানবদেহের বিষয় সম্পকে লিখে গিয়েছেন। যারা এ বিষয়য়ে অজ্ঞ তাদের জ্ঞানীরা যাতে এ কথার মাধ্যমে জ্ঞান দিতে পারে এজন্য সাঁইজি এ গানটি আমাদের জন্য রেখে গেছেন।

রশিদ বাউল বলেন, মানুষের জীবনে শিশুকাল, যৌবনকাল ও বৃদ্ধকালে শরীর পরিবর্তন হয়। সেসঙ্গে মনেরও পরিবর্তন হয়। আমরা মানুষ হিসাবে যেটি দেখতে পায় সেটা প্রকৃত মানুষ না। সাঁইজি এটাকে খাঁচা বলেছেন এবং প্রকৃত মানুষ হলো ভেতরের মানুষ। আমরা যদি আমাদের ভেতরের পাখিটাকে দেখতে পেতাম তাহলে তাকে চিনতে পারতাম, তাকে যদি নাই চিনতে পারি তাহলে ধরবো কী করে।

এভাবেই একেক সাধুরা বাউল সম্রারাট ফকির লালন শাহ’র একেক গানের ব্যাখ্যা দেওয়ার মধ্য দিয়ে লালননের দর্শন ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ভক্ত-আশেকান ও দর্শনার্থীরাও তাদের মাধ্যমে লালন সম্পর্কে, লালনের গান সম্পর্কে জানতে পারছেন। রশিদ বাউলের কাছ থেকে এসব গানের তত্ত্ব শুনছেন অনেক দর্শনার্থীরা।

সম্রাট ইসলাম নামে একজন দর্শনার্থী বলেন, মানুষের মধ্যে যে মানুষ বসবাস করে এটা এই গানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বাউল ফকির লালন শাহ’র এসব গানের মধ্য দিয়ে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা আমরা এই আঁখড়াবাড়ীতে এলে বুঝতে পারি। এত সাধু এবং তারা লালনের গানের যেসব ব্যাখ্যা দেয় সেগুলো শুনতে বেশ ভালো লাগে।

ইমরুল শাহ নামে এক ভক্ত বলেন, সাঁইজির গানের মধ্যেই লুকায়িত আছে সব রহস্য। সেগুলো সঠিকভাবে জানার জন্যই এখানে আসি। এখানে অনেক বড় বড় সাধু ভক্তরা আসে। আর সাঁইজির এসব বাণীর সঠিক ব্যাখ্যা এই মাজারেই পাওয়া যায়। সাঁইজির কথাগুলো জানতে হলে এই ধামে আসতে হবে। প্রকৃত অর্থে সাঁইজির দর্শন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানচর্চা করতে হলে সাধুদের কাছে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।