ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দক্ষ জনবলের অভাবে দেশে তৈরি হচ্ছে না কৃত্রিম পা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
দক্ষ জনবলের অভাবে দেশে তৈরি হচ্ছে না কৃত্রিম পা

ঢাকা: খুলনার কয়রা এলাকার মেহেদী হাসান রনি। বছরখানেক আগে পিকআপভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে ডান পা হারান তিনি। রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসা নিতে এলে হাসপাতাল থেকেই বিনামূল্যে কৃত্রিম পা (লিম্ব) দেওয়া হয় তাকে।

সংযোজিত এ পা নিটোর লিম্ব সেন্টারেই তৈরি করা হয়েছে বলে জানান রনি। ভারতের জয়পুর ফুট কোম্পানির সহায়তায় চাহিদানুযায়ী লিম্ব তৈরি করে নিটোর।

প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও দক্ষ শ্রমিকের যোগানও দেয় ভারতের এ প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে এ কাজ সম্পাদিত হচ্ছে। দিনে অন্তত ২৫টি লিম্ব তৈরি হয় নিটোরে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত কৃত্রিম পা বানিয়ে বিতরণ করে যাবে তারা।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিটোরের একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে এখানেই তৈরি হতো লিম্ব। শুধু দক্ষ জনবলের অভাবে ২০১০ সালে কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়। এ কাজে নিয়োজিত দক্ষ শ্রমিকেরা অবসরে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ বাংলাদেশে সহজেই দক্ষ শ্রমিক পাওয়া সম্ভব।

নিটোর কর্তৃপক্ষ বলছে, কৃত্রিম পা তৈরির জন্য নিটোরে মাত্র ৮ জন কারিগর নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যার প্রতিটিই এখন খালি। দেশের বাইরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে দেশেই কৃত্রিম পা তৈরি করে দেশীয় চাহিদা মেটানো অসম্ভব কিছু নয়।  

এ পর্যন্ত ভারতের এই প্রতিষ্ঠান থেকে কৃত্রিম পা পেয়েছেন মোট ৩শ জন। তবে আর ২শ লিম্ব তৈরি করবে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ দেশে প্রতিবছর দুই হাজার পায়ের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে না পেয়ে অনেককেই বাধ্য হয়ে বিদেশ যেতে হয় লিম্বের জন্য।  

দেশে অনেক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারান। সরকারের এদিকে নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।  

অর্থোপেডিক সোসাইটির মহাসচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. ওয়াহেদুর রহমান বলেন, ২০১৫ সাল থেকে কৃত্রিম পা দেওয়া শুরু হলেও গত বছর পা পাননি কেউ। এছাড়া চাহিদা থাকার পরও বছরে ৭শর বেশি লিম্ব দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।  

তিনি আরও বলেন, মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারত ৫শ কৃত্রিম পা উপহার দিচ্ছে। মঈন ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান দেবে আরো ৭শ পা। কিন্তু এরপর নিটোর কর্তৃপক্ষ পা-এর যোগান দিতে পারবে না।  

ডা. ওয়াহেদুর রহমান জানান, পা তৈরির সব ব্যবস্থা থাকার পরও শুধু দক্ষ জনবলের অভাবে এই ব্যবস্থা চালু করতে ব্যর্থ হচ্ছে নিটোর। সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলেই কার্যক্রম শুরু করতে পারবে হাসপাতালটি।  

সবশেষে তিনি বলেন, নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল গণি মোল্লা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এরইমধ্যে দক্ষ জনবল তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন। দেশে বসে পা তৈরি করতে পারলে স্বল্প টাকাতেই চিকিৎসা করতে পারবেন দুর্ঘটনায় পা হারানো ব্যক্তিরা।  

বাংলাদেশ সময়:  ১৯৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
এমএএম/কেএসডি/ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।