ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাহাড়ে অশান্তি: সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ বার্তা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
পাহাড়ে অশান্তি: সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ বার্তা

খাগড়াছড়ি: সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, মাদকের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানে সরকার। ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে অভিযান। রেহাই পাচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের অনেক বড় বড় নেতাও। এরমধ্যেই অশান্তি দেখা যাচ্ছে পাহাড়ে। পার্বত্যাঞ্চলের তিন জেলার মানুষ চার পাহাড়ি সংগঠনের ক্যাডারদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে যেন। সেজন্য পাহাড়ি জনপদে শান্তি ফেরাতে এদিকেও নজর দিয়েছে সরকার। নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট প্রায় সব বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে এসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। যে দু’একটি সভায় বক্তব্য রেখেছেন, প্রায় সব জায়গায়ই সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-মাদকের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই দশকে পাহাড়ে সন্ত্রাসী আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অস্ত্রবাজির শিকার হয়েছে অন্তত ১ হাজার ১০০ মানুষ। অস্ত্রবাজি-খুনোখুনিতে যে চার সংগঠনের নাম আসে সেগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), তাদের বিরোধিতায় গড়ে ওঠা ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), জেএসএস ভেঙে হওয়া জেএসএস-এমএন এবং ইউপিডিএফ ভেঙে হওয়া ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।

এ সংগঠনগুলোর সাম্প্রতিক বেশ কিছু আলোচিত সহিংস ঘটনা সরকারকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সংঘাত বৃত্ত ভেঙে এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরীহ জনগোষ্ঠী। আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর আধিপত্যের লড়াই, চাঁদাবাজি, খুনোখুনিতে ভয়-আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে সাধারণ লোকজনকে। সেজন্য এবার গাইডলাইন তৈরির কথা ভাবতে হচ্ছে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের।

তারই অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা পার্বত্যাঞ্চলে এসেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), বিজিবির মহাপরিচালক, র‌্যাবের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান ও তিন পার্বত্য জেলার সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, এমনকি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও।
 
এই নীতি-নির্ধারকরা স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে পাহাড়ের অবস্থা জানতে চাইছেন। সবার সঙ্গে কথা বলে চাইছেন গাইডলাইন তৈরি করতে।
 
বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে একটি বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ব্রিফিংয়ে কিছু বিষয় স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও নির্বাচন কাজে যাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, একটা ভীতি পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টা ছিল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর। আমরা বলেছি বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঠাঁই হবে না। সেই আলোকে তিন পার্বত্য জেলায়ও কোনো সন্ত্রাসের জায়গা হবে না, তাদের যেকোনো মূল্যে নির্মূল করা হবে। সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও চাঁদাবাজদের এই এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হবে। ’

পার্বত্য এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসীদের যে তৎপরতা, সেই তৎপরতা বন্ধে বিশেষ এ বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তি চুক্তির আলোকে যেখান থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেখানেই পুনরায় নিরাপত্তার স্বার্থে চুক্তির আলোকে পুলিশ বা বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হবে। ’
               
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে খাঁন কামাল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব সুদত্ত চাকমা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান, বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ এবং তিন জেলার প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  

এর আগে দুপুরে খাগড়াছড়ির রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা পুলিশ আয়োজিত সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবিরোধী এক সমাবেশে প্রধান অতিথির আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা যদি ভুল স্বীকার করে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয় তাহলে আমরা ভেবে দেখবো। পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে আমরা সব উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সুন্দরবনের জলদস্যুরা ক্ষমা চেয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। যারা করেনি তাদের নির্মম পরিণতি হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়ি আমার প্রিয় একটি জেলা। এখানে অনেকবার এসেছি। পাহাড়ের অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত এমন এলাকা খুব কমই দেখেছি। কিন্তু এই পাহাড়ে কেন এত অশান্তি, কেন এত বিভ্রান্তি তা রাঙামাটিতে যে বৈঠক হবে সেখান থেকে বিস্তারিত জানবো। পাহাড়ে কী নেই, কীসের অভাব? সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। তারপরও কেন রক্তের হোলি হবে, অশান্তি হবে, তা খতিয়ে দেখবো। ’

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ১০টায়ও একই বিষয়ে রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটে তিন পার্বত্য জেলার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আরেকটি সভা করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই সভা থেকে উপস্থিত সবার সঙ্গে কথা বলে একটি গাইডলাইন তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
এডি/এইচএ/

** ‘তিন পার্বত্য জেলায় সন্ত্রাস-মাদক নির্মূল করা হবে’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad