ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইউপি চেয়ারম্যানের ফেরত দেওয়া সেই টিন ত্রাণের নয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
ইউপি চেয়ারম্যানের ফেরত দেওয়া সেই টিন ত্রাণের নয়

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় অভিযোগের পর ভুক্তভোগীকে ফেরত দেওয়া পলাশী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলীর ব্যবহৃত সেই টিন ত্রাণের নয় বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। 

বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে বাংলানিউজকে বিষয়টি জানান তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মফিজুল ইসলাম।

অভিযোগকারী ভুক্তভোগী ভ্যান চালক একরামুল হক উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি গ্রামের মৃত সামছুল ইসলামের ছেলে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ত্রাণ অফিস থেকে গত দেড় বছর আগে নামুড়ি গ্রামের একরামুল হকের নামে ১৬টি ত্রাণের ঢেউটিন বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই টিন পলাশী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী নিজের বাড়িতে ব্যবহার করেন। একই সঙ্গে ওই ভ্যান চালকের নামে একটি সোলার প্যানেল বরাদ্দ নিয়ে চেয়ারম্যান নিজের কাজে ব্যবহার করেন। সেই টিন ও সোলার চাইতে গেলে ঘোরাতে থাকেন ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী।

অবশেষে, নিরুপায় হয়ে টিন ও সোলার উদ্ধার করতে ভ্যান চালক একরামুল গত ৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি জানতে পেয়ে নিজেকে বাঁচাতে পলাশী ইউপি চেয়ারম্যান কৌশলে ওই ভ্যান চালককে রোববার (১৩ অক্টোবর) বাড়িতে ডেকে নিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ব্যবহৃত ১২টি ঢেউটিন ফেরত দেন।  

ভ্যানচালক একরামুল হক

এ ঘটনায় প্রকৃত ত্রাণের টিন ও সোলারসহ স্বাক্ষর নেওয়া সাদা কাগজটি উদ্ধার করতে রোববার (১৩ অক্টোবর) রাতে আদিতমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ওই ভ্যান চালক একরামুল হক। ঘটনাটি থানা পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত চলমান রয়েছে বলে দাবি করেছেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সাইফুল ইসলাম।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) বাংলানিউজে ‘ঘর থেকে ত্রাণের টিন ফেরত দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ভারপ্রাপ্ত) জিআর সারোয়ারের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মফিজুল ইসলাম।  

এদিকে নিজেকে বাঁচাতে কৌশলী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী অভিযোগকারীর স্বাক্ষর নেওয়া সাদা কাগজটিতে অভিযোগ প্রত্যাহারের লিখিত একটি চিঠি অভিযোগ দাখিল করা দফতরগুলোতে পাঠান। এই ভুয়া ও মিথ্যা চিঠি পাঠিয়ে সরকারি বিভিন্ন দফতরের তদন্ত কাজকে বাধাগ্রস্ত করে উল্টো তাকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ভ্যান চালক একরামুল হক।

ভ্যান চালক একরামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, টিন দিতে চেয়ে দেড় বছর আগে আমার স্বাক্ষর নেন চেয়ারম্যান। দেই দিচ্ছি বলে দেড় বছর অতিবাহিত হলে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দায়ের করি। এরপর বাড়িতে ডেকে নিয়ে চেয়ারম্যান ১২টি টিন দিয়ে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। সেই স্বাক্ষর করা কাগজটি দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের মিথ্যা নাটক করছেন চেয়ারম্যান।  

পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, একরামুল নিজেই অভিযোগ দিয়েছেন এবং নিজেই আবার প্রত্যাহার করতে আবেদন করেছেন। একরামুল টিন নিয়ে বিক্রি করতে পারেন। তাকে (একরামুল হক) চাপ দেন টিন কোথায় রেখেছে বের করুক। নয় তো একরামুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মজিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চেয়ারম্যানের ফেরত দেওয়া টিনগুলো ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নয়। ফেরত দেওয়া ব্যবহৃত এসব হালকা টিন ৩২০ মিলি গ্রামের এবং ত্রাণ শাখার সিলমোহর নেই। ত্রাণ শাখার বিতরণ করা ঢেউটিনে ত্রাণের সিলমোহর থাকে এবং পুরুত্ব ৪৬০ মিলি গ্রামের। তবে ভুক্তভোগী ভ্যান চালকের নামে বরাদ্দ দেওয়া সেই টিনের অনুসন্ধান চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad