ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফাহাদ হত্যায় ‘পরোক্ষ দায়’ অমিতের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
ফাহাদ হত্যায় ‘পরোক্ষ দায়’ অমিতের অমিত সাহা। ফাইল ফটো

ঢাকা: ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে অমিত সাহা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টিতেই ফাহাদকে খুন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, অমিত শাহ হয়তো ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।

তবে, ফাহাদ হত্যায় তার প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ দায়-দায়িত্ব রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তা উঠে এসেছে। এ কারণেই অমিতকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, কেউ ঘটনাস্থলে থেকেও অপরাধ করতে পারে, আবার না থেকেও করতে পারে। অনেক ঘটনাতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে না থেকেও কেউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অমিতের ক্ষেত্রেও তেমনই কিছু ঘটেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে মোটিভ খুঁজে বের করাটা আমাদেরও তদন্তের মূল বিষয়। ফাহাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল, সেটা আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ করার আগে মোটিভ সম্পর্কে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা প্রাথমিকভাবে যা জেনেছি তা হলো, অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টি।

ডিএমপির ঊর্দ্ধতন এই কর্মকর্তা বলেন, দ্রততার সঙ্গে আমাদের পুলিশ সদস্যরা তৎপরতা শুরু করে। এ কারণে মামলার এজাহার দায়েরের আগেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে আটক করতে সক্ষম হই়। এজাহার দায়েরের পরেও আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। অল্প সময়ে আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

টর্চার রুমে কার কী ভূমিকা ছিল- এ প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরেই বলতে পারবো। রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা একটা ক্লিয়ার পিকচার নেওয়ার চেষ্টা করছি। পুরোপুরি পরিষ্কার পিকচার পেতে আমাদের আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।

তিনি বলেন, সেদিন কারা ছিল, কারা ছিল না- তা যাচাই করা হচ্ছে। যেহেতু মারধরের কোনো সুনির্দিষ্ট ছবি বা ভিডিও নেই। এমনও হতে পারে, অনেকে আশপাশের রুমের, যারা ঘটনা শুনে এসেছেন। আবার কেউ কেউ এমনও থাকতে পারেন যে, ছবিতে নেই, কিন্তু ঘটনাস্থলে ছিলেন বা মারধরের সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতার ব্যক্তিরা ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইছে। তাদের দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে তদন্ত চলছে।

আরও পড়ুন> এজাহারে নাম না থাকলেও সংশ্লিষ্টতায় ৩ জন গ্রেফতার

শিবির সন্দেহে মারধর শুরু করা হয়েছিল কি-না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটি একটি কারণ হতে পারে। তবে, এটিই একমাত্র কারণ কি-না, তা এখনই বলা যাবে না।

ঘটনার দিন হলে উপস্থিত হওয়ার পরে টহল পুলিশের কী ভূমিকা ছিল, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, হলের ভেতর কাউকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে- এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছে ছিল না। ইউনিভার্সিটিতে একটা রেওয়াজ রয়েছে। টহল পুলিশ অপেক্ষা করার পরে জানানো হয়েছে, ভেতরে কোনো সমস্যা নেই।  

তিনি বলেন, ভেতরে নৃশংস ঘটনা ঘটছে, এ বিষয়ে আমাদের জানা থাকলে ভেতরে ঢুকার মতো ক্যাপাসিটি ছিল কি-না, সেটা বিষয় নয়। জানতে পারলে আমরা সবাই সেখানে ‘রাশ’ করতাম। অতীতেও আমরা এভাবে ভেতরে প্রবেশ করছি।

ফাহাদ হত্যার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা জানলে হয়তো এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারতো না। আমরা যখন জেনেছি, তখন কিন্তু মামলা দায়েরের আগেই ১০ আসামিকে আটক করা হয়েছে। আমাদের আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের কোনো ঘাটতি ছিল না। ভেতরে একটা ঘটনা ঘটছে, সেটা জানা থাকলে আমরা রেওয়াজ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের পারমিশন নেওয়ার অপেক্ষা করতাম না।

কোন মেসেজ পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, কেউ একজন পুলিশকে জানিয়েছে, ভেতর গোলমাল হচ্ছে। সেই ম্যাসেজে টহল পুলিশ গিয়েছিল। কিন্তু, হলের বাইরে থেকে ভেতরে কী হয়েছে, তা বোঝা যায়নি। পুলিশের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশার আব্দুল বাতেন বলেন, ৩০-৪০ মিনিট পুলিশ অপেক্ষা করার পর ছাত্ররাই বলেছে, ভেতরে কোনো সমস্যা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
পিএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।