ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছাত্র সংগঠনকে দলে না ব্যবহারের বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
ছাত্র সংগঠনকে দলে না ব্যবহারের বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে

ঢাকা: ছাত্র সংগঠনগুলিকে রাজনৈতিক দলগুলির অঙ্গ সংগঠন হিসাবে ব্যবহার না করার যে বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আছে, তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। 

একইসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)  শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিও তুলেছে সংগঠনটি।

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (৯ অক্টোবর) এসব দাবি করা হয়েছে।

আরপিও’র ৯০(বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র বা শিক্ষক; কোনো আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বা শ্রমিক এবং অন্য যেকোনো পেশার সদস্যদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গঠন করতে পারবে না। এই বিধান না মানলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।

দলগুলো তাদের গঠনতন্ত্রে এই ধরনের সংগঠনগুলো না রাখলেও প্রতিটি দলেরই এমন সংগঠন রয়েছে।

সুজনের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বুয়েট  শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ফেসবুকে নিজের রাজনৈতিক মত প্রকাশ করার জন্য নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় সারাদেশের মানুষ এখন স্তব্ধ এবং ক্ষুব্ধ। স্বাভাবিকভাবেই আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এখন আন্দোলনে উত্তাল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। আমরা আবরার হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা এবং শিক্ষার্থীদের এই নায্য আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। অতিসত্বর দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে এধরণের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

নাগরিক সংগঠন হিসেবে সুজন মনে করে সব নাগরিকের ভিন্নমত ধারণ এবং তা প্রকাশ করার স্বাধীনতা রয়েছে। কোনোভাবেই কেউ যেন তাতে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। শিক্ষার্থীরা এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞান, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যবোধ চর্চা করবে -এটাই কাম্য। সেখানে ভিন্নমত পোষণ করার জন্য আবরারকে অসুস্থ ছাত্র রাজনীতির বলি হতে হলো, যা  কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন -দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ বাঁক পরিবর্তনে ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ছাত্রদের স্বার্থ বাদ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিতে লিপ্ত হওয়ায় ছাত্র রাজনীতি এখন শুধুই ক্ষমতা চর্চার জায়গায় পরিণত হয়েছে।

আমরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ উল্লেখিত ছাত্র সংগঠনগুলিকে রাজনৈতিক দলগুলির অঙ্গসংগঠন হিসেবে ব্যবহার না করার বিধান-90B(1)(b)(iii) অবিলম্বে বাস্তবায়ন করে ছাত্রদের অধিকারভিত্তিক গৌরবোজ্জ্বল ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে দেশে বিদ্যমান বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান করতে হবে যাতে এধরনের ঘটনা ঘটাতে কেউ আর সাহস না পায়।

মায়ের বুক খালি করে আবরারের চিরতরে চলে যাওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দায় এড়াতে পারে না বলে আমরা মনে করি। আমরা আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িতদের খুঁজে বের করে যথাযথ বিচারের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে বুয়েটসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বুয়েট ইচ্ছে করলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে পারে। দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্ররাজনীতি নেই। তবে তিনি দেশে ছাত্ররাজনীতি থাকার পক্ষে বলেও মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
ইইউডি/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।