ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গোপসাগরে ফের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, জেলেদের ক্ষোভ

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৯
বঙ্গোপসাগরে ফের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, জেলেদের ক্ষোভ নিষেধাজ্ঞার কারণে ঘাটে বাঁধা মাছ ধরা ট্রলারগুলো। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: ইলিশের বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে প্রজনন মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। 

এর আগে, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এর মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে আবারও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ছে জেলেরা।

এ খবরে জেলার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ইলিশের ভরা মৌসুমে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তেমনি সামুদ্রিক মাছের সংকটে পড়বে দেশ- এমনটাই মনে করছেন তারা।  

বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ আহরণের মৌসুম মাত্র পাঁচ মাস। এর মধ্যে জেলেদের প্রায় আড়াই মাস নিষেধাজ্ঞার কারণে বেকার থাকতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন বেকার থাকায় ঋণে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। এ ক্ষতি মেনে নিয়ে বাংলাদেশি জেলেরা মাছ আহরণ বন্ধ রাখলেও দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে বিদেশি জেলেরা ঠিকই মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে, বাংলাদেশে সামুদ্রিক মাছের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।  

তবে, সরকারের পক্ষ থেকে ইলিশ শিকারিদের সহযোগিতা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই সামান্য বলে জানিয়েছেন জেলেরা।

সোমবার (৭ অক্টোবর) সকালে বাগেরহাট কেভি বাজারে ট্রলারে মাছ নিয়ে আসা জেলে সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বছরে মাত্র পাঁচ মাস ইলিশ ধরা যায়। গভীর সাগরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা মাছ ধরি। এই সময়ের মধ্যেই সরকারের একাধিক নিষেধাজ্ঞা থাকে। তার মধ্যে আমাদের অসুস্থতাসহ নানা সমস্যাও থাকে। পাঁচ মাসের মৌসুমে এত সময় নিষেধাজ্ঞা থাকলে আমরা কীভাবে মহাজনের ঋণ শোধ করবো আর কীভাবেই বা নিজেরা খাবো?

ট্রলার মালিক মানিক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবার সাগরে একটি ট্রলার পাঠাতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু, এবছর যে মাছ পাচ্ছি, তাতে খরচের টাকাও উঠছে না। এবারের মতো এত বেশি ক্ষতির মুখে আগে কখনো পড়তে হয়নি।  

জেলে রুস্তম আলী বাংলানিউজকে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরেকটু কমিয়ে আনলে জেলেরা আরও বেশি ইলিশ ধরতে পারবে। আর, এবারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরও এক সপ্তাহ পরে শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।  

আরও কয়েকজন জেলে বলেন, ৬৫ ও ২২ দিন- দুইবারের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের প্রায় তিন মাস বেকার থাকতে হয়। এর সঙ্গে ঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় আমাদের মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হয়। এই সময়ে আমাদের আর কোনো আয় থাকে না। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারের পক্ষ থেকে সামান্য সহযোগিতা কেউ কেউ পেলেও, বেশিরভাগ জেলেরাই এর বাইরে থাকে। যে সময়টা মাছ ধরা বন্ধ থাকে, সে সময় সরকার যদি আমাদের জন্য বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান ও আরও বেশি সহযোগিতার ব্যবস্থা করে, তাহলে আমরা খেয়ে-পরে থাকতে পারতাম।

আসলাম নামের আরেক জেলে বাংলানিউজকে বলেন, ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার মাত্র ২০ কেজি চাল দেয়। আমার ছয়জনের সংসার, এই বিশ কেজি চালে কী হয়? আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানাই।

বাগেরহাট ট্রলার মালিক সমিতির নেতা সাইফুল ইসলাম খোকন বাংলানিউজকে বলেন, ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার সময় সব জেলে মাছ ধরা বন্ধ রাখে। কিন্তু, সরকারি সহযোগিতা করা হয় শুধু মাত্র ইলিশ শিকারিদের। জেলার প্রায় অর্ধলক্ষ জেলেদের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ১৯৪ জন জেলেকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হবে। এই সহযোগিতা সবাইকে দেওয়ার দাবি জানাই।

বাগেরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কেবি বাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বাংলানিউজকে বলেন,  যে অবস্থা তাতে মাছ ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। এ বছর সবচেয়ে বড় লোকসানের মুখে পড়েছি। ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করি, এমন বিপর্যয় আগে কখনো দেখিনি।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের মোট ইলিশ উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ইলিশের গড় আকারও বড় হয়েছে। তবে, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা একটু সমস্যায় থাকে। সে কথা বিবেচনায় রেখে সরকার জেলেদের সহযোগিতা করছে। জেলায় আমাদের ৩৯ হাজার ৫শ’ জেলে রয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর, কচুয়া, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা, শরণখোলায় ইলিশ শিকারি জেলে রয়েছে। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার সময় এই সাত উপজেলার ৫ হাজার ১৯৪ জন জেলেকে সহযোগিতা করা হবে। এই সময়ে প্রত্যেক জেলে ২০ কেজি করে চাল পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।