ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে ইতিহাস শত্রুও রচনা করতে পারবে না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৯
‘বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে ইতিহাস শত্রুও রচনা করতে পারবে না’ বক্তৃতামালায় কথা বলছেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক আবুল মকসুদ, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘদিন গাড়িতে, নৌকা, লঞ্চে, হেলিকপ্টারে যাতায়ত করার সুযোগ পেয়েছি। তাকে অনেক কাছে থেকে দেখেছি। সেখান থেকে বলতে পারি, তার জীবন কাহিনী শতাব্দীর পর শতাব্দী লিখিত হবে; বিচার বিশ্লেষণ করা হবে। কখনও তিনি নন্দিত হবেন, কখনও সমালেচিত। কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস কোনোক্রমেই রচনা করতে পারবে না কেউ। এমনকি তার শত্রুও।’

সোমবার (০৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতামালা’য় এ কথা বলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক আবুল মকসুদ।

এসময় বঙ্গবন্ধুর অসামপ্ত আত্মজীবনী নিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি বিশ্বাসযোগ্য লিখিত দলিল।

এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু যা লিখে গেছেন, তা সত্যিই বাস্তব এবং সত্য। অন্তত ওই সময়কার ইতিহাস নিয়ে লেখালেখির জন্য আমি দেশের বাইরের তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রায় দুই লাখ পৃষ্ঠা ঘেঁটেছি। তাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কথাগুলো আমার কাছে আরও বেশি সত্য হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধু একজন সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। তিনি মানুষকে ভালোবেসেছেন, তাদের সম্মান দিয়েছেন। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ৭ মার্চের ভাষণ। এ দিন তিনি বাঙালির সবচেয়ে বড় নেতা হওয়া সত্ত্বেও ইয়াহিয়া খান এবং ভুট্টো সাহেবের নাম উচ্চরণের আগে তাদের সম্মান জানিয়ে জনাব বলে আখ্যায়িত করেন। অথচ তিনি চাইলে তা নাও করতে পারতেন। আর এখানেই তার মহত্ব।

বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত এ স্মারক বক্তৃতায় আরও বক্তব্য রাখেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার।

আবুল মকসুদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংস্কৃতি প্রেম এবং দূরদৃষ্টির কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭৪ সালে বন্যার সময় আমরা থিয়েটারের কর্মীরা দুই থেকে তিন হাজার টাকা গুছিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিতে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু খুব খুশি হয়ে আমাদের সামান্য সাহায্য গ্রহণ করে আমাদের নাট্যকর্মীদের জন্য কোনো অফিস প্রয়োজন কি-না জানতে চাইলেন। আমরা ভাবলাম এখন নতুন দেশ, সরকারের কতকিছুর প্রয়োজন! এসময় আমাদের অফিসের জন্য বাড়ি না হলেও চলবে। তাই তাকে আপাতত প্রয়োজন নেই বললাম। বঙ্গবন্ধুর কত দূরদৃষ্টি ছিল! এখন দলের জন্য বা থিয়েটার স্কুলের জন্য একটা স্থায়ী ঠিকানার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে।

বক্তা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু রামপুরায় গেলেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের নতুন ভবন পরিদর্শনে। অভ্যর্থনাকারীদের সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তরুণ প্রযোজক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাকে দেখে বঙ্গবন্ধু দুই হাত গালে জড়িয়ে আদর করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী, তোমাদের নাটক কেমন চলছে?’ সেসময় কিন্তু প্রমথ কর ও সেন্সরশিপের আইন কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করার ফলে ঢাকার নিয়মিত নাট্যচর্চা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মামুন জবাব দিল, আপনি তো নাটক বন্ধ করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কারণ জানতে চাইলে মামুন এ দুটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। পাশে দাঁড়ানো ছিলেন অর্থমন্ত্রী ড. এ আর মল্লিক। তাকে বঙ্গবন্ধু বললেন, কী মল্লিক সাহেব, ‘নাটকের লোকদের কাছ থেকে টাকা না নিলে কী আমার সরকার চলবে না?’ বঙ্গবন্ধু পরদিনই মামুনকে তার সঙ্গে দেখা করতে বললেন।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমি আর মামুন বঙ্গবন্ধুর কথা অনুযায়ী গণভবনে গিয়ে হাজির হলাম। আমাদের বন্ধু ফরাস উদ্দিন ছিলেন তখন রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সচিব। ফরাস ভাইকে ডেকে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আজই রাষ্টপতির আদেশ জারি করে দাও, এখন থেকে সৌখিন নাট্যদলগুলোকে কোনো প্রমথ কর দিতে হবে না এবং সেন্সর পুলিশের বদলে শিল্পকলা একাডেমিতে একটি নাটক সেন্সর কমিটির মাধ্যমে হবে। ’ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে জটিলতা হবে ভেবে তিনি এ বিষয়ে সরাসরি রাষ্টপতির আদেশ জারির কথা বললেন। তারপরই নাটকের ওপর থেকে প্রমথ কর উঠে গেল এবং সেন্সরের দিক থেকে নাটক সহজতর হলো। এরপর আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা ২০০০ সালে নাটক সেন্সর আইন পুরোপুরি বাতিল করেন।

আয়োজনে বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা অধ্যায়, বাঙালির প্রতি তার ভালোবাসা এবং বাংলাদেশকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করাসহ তার দেশপ্রেম এবং মহৎ ব্যাক্তিত্ববোধের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন নিজেদের বক্তব্যে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৯
এইচএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।