ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৩৩৩ নম্বরে কল করেও বন্ধ করা গেল না বাল্যবিয়ে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৯
৩৩৩ নম্বরে কল করেও বন্ধ করা গেল না বাল্যবিয়ে

লালমনিরহাট: বাল্যবিয়েমুক্ত লালমনিরহাটে ফের বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ময়ুরী আক্তার মুক্তা (১৩) ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রী।

হটলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করে তথ্য দিয়েও বাল্যবিয়ে থেকে ওই ছাত্রীকে রক্ষা করা যায়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।  

শুক্রবার (০৪ অক্টোবর) দিনগত রাতে আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গন্ধমরুয়া গ্রামে প্রতিবেশীর বাড়িতে এ বিয়ে হয়।

ময়ুরী আক্তার মুক্তা ওই গ্রামের মোক্তার আলীর মেয়ে। সে স্থানীয় গন্ধমরুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী।

স্থানীয়রা জানান, মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জেলার হাতীবান্ধা এসএস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গত ২০১৫ সালের ২৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে লালমনিরহাটকে বাল্যবিয়েমুক্ত জেলা  হিসেবে ঘোষণা করলেও থেমে নেই বাল্যবিয়ে। এক শ্রেণির অসাধু ঘটক ও নিকাহ রেজিস্টার টাকার বিনিময়ে চালিয়ে যাচ্ছে বাল্যবিয়ে। প্রায় সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করেও বাল্যবিয়ে রোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন জেলা প্রশাসন। প্রতিটি ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্টার অন্য পেশায় জড়িত থাকায় দুই/তিনজন করে সহকারী বা ভায়া নিকাহ রেজিস্টার রেখেছেন। যারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

শুক্রবার রাতে এমনিভাবে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ময়ুরী আক্তার মুক্তা। মুক্তার প্রতিবেশী আলীর বাড়িতে আত্মীয় আসবে বলে আয়োজন চলে। হঠাৎ রাতে বরযাত্রী চলে আসে। পাশের বাড়ির ভায়া নিকাহ রেজিস্টার শরীফুল ইসলাম গোপনে রেজিস্ট্রি ও ধর্মীয় মতে বিয়ে পড়িয়ে চম্পট দেন বলে দাবি স্থানীয়দের। গ্রামবাসী বুঝতে পেরে হটলাইনের ৩৩৩ নম্বরে কল করে বিষয়টি অবগত করে। কিন্তু এক ঘণ্টা আগে না জানানোর জন্য কোনো সেবা দিতে পারবে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন ৩৩৩ নম্বরের সেবা প্রদানকারী।

বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও - ভারপ্রাপ্ত) জয়শ্রী রানীকে অবগত করলে তিনি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এরই মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানে গ্রাম পুলিশ রবিউল ইসলাম ইউএনও'র আগমনের খবর দিলে বরযাত্রী কনে মুক্তাকে নিয়ে দ্রুত চলে যান। ইউএনও'র নির্দেশে আধাঘণ্টা পরে পুলিশ এসে ওই বাড়িতে বিয়ের আলামত পেলেও কাউকে পাননি। এভাবে উদ্যোগ নিয়েও বাল্যবিয়ে ঠেকাতে পারেননি বলে ক্ষোভ গ্রামবাসীর। এমনিভাবে ওই এলাকায়  বেশ কয়েকটি বাল্যবিয়ে রেজিস্ট্রি করায় ভায়া নিকাহ রেজিস্টার শরীফুলের বিরুদ্ধে দেড় বছর আগে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো সুফল মেলেনি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

গ্রাম পুলিশ রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, থানা থেকে ফোনে বাল্যবিয়ের খবর নিতে বলায় আমি ওই বাড়িতে গিয়ে কয়েকটি গাড়ি দেখে তাদের বাল্যবিয়ে না দিতে বলি। পরে পুলিশ এসে বাড়িতে কাউকে পায়নি।

অভিযুক্ত ভায়া নিকাহ রেজিস্টার শরীফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার পাশের বাড়ির মেয়ে মুক্তা ৮ম শ্রেনিতে পড়লেও জন্ম সনদে তার বয়স ১৭ বছর ৬ মাস। বয়স ৬ মাস কম থাকায় বিয়ে রেজিস্ট্রি করিনি। পুলিশ আসায় বিয়েটা হয়নি বলে গ্রাম পুলিশ মারফতে শুনেছি।

দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্টার কাজী মাহমুদুল হাসান জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামবাসীর কাছে বিষয়টি জানতে পেয়ে আমি নিজেও ইউএনও মহোদয় ও ৩৩৩ নম্বরে কল করে সহযোগিতা কামনা করি। তারপরেও স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। ভায়া নিকাহ রেজিস্টার শরীফুল ইসলাম গোপনে এভাবে বাল্যবিয়ে রেজিস্ট্রি করে আসছেন অন্যের ভলিয়মে। বিষয়টি প্রশাসনকে একাধিকবার অবগত করা হলেও এই স্বঘোষিত ও ভায়া নিকাহ রেজিস্টারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

গন্ধমরুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখলাতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তা ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। পূজার ছুটি থাকায় বাল্যবিয়ের খবর পাইনি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ভারপ্রাপ্ত) জয়শ্রী রানী রায় বাংলানিউজকে বলেন, দুই উপজেলার পূজার দায়িত্বে থাকায় নিজে না গিয়ে পুলিশ পাঠিয়েছি। আসলে নিজে না গেলে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয় না।  
তবে ভায়া নিকাহ রেজিস্টারসহ মুক্তার বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।