ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে মিয়ানমার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৯
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে মিয়ানমার মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা নারীর কোলে ছোট্ট দুই শিশু, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে মিয়ানমার। দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- বেশ কয়েক দফায় ৩২২ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরে গেছেন। তবে মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। সে কারণে রোহিঙ্গারা সেখানে স্বেচ্ছায় ফিরে গেছেন কি-না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দুই দফায় ব্যর্থ হওয়ার পর চীনের মধ্যস্থতায় নতুন করে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে গত সপ্তাহে জাতিসংঘে নতুন করে চার দফা প্রস্তাবও পেশ করেছেন।

কিন্তু জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকাল থেকেই দফায় দফায় রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করছে মিয়ানমার সরকার।

চলতি বছরের ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা ‍প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেদিন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সব প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সে সময় একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যেতে রাজি হননি। এছাড়া গত বছরের ১৫ নভেম্বরও বাংলাদেশ এবং মিয়ানরমার সরকার একইভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিলে সে প্রক্রিয়াও ব্যর্থ হয়।

দুই দফায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে সমাবেশ করে পাঁচ দফা দাবি পেশ করা হয়। এর মধ্যে প্রধান দাবি- রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সরকারকে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকত্ব নিশ্চিত ছাড়া সেখানে তারা ফিরে যাবে না বলেও ঘোষণা দেয়।

এদিকে, রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে না চাইলেও মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে এখন দাবি করা হয়েছে, গত দুই সপ্তাহে ৩২২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরে গেছেন। ঢাকার মিয়ানমার দূতাবাস থেকে দাবি করা হয়েছে, গত ২ অক্টোবর নয়জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে গেছেন। রাখাইনের নাগখোয়া রিসিপশন সেন্টারে এই নয় রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার পর তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইভাবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ১৬ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ থেকে ফিরে গেছেন বলে মিয়ানমার দাবি করেছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২৬ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে ফিরে গেছেন বলে দেশটি দাবি করেছে। এসব রোহিঙ্গা রাখাইনের নাগখোয়া রিসিপশন সেন্টারে গেলে তাদের স্বাগত জানিয়েছে মিয়ানমার। এভাবে গত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩২২ জন রোহিঙ্গা রাখাইনে ফেরত গেছেন বলেও দাবি করেছে দেশটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার সরকার থেকে এখনও বাংলাদেশকে অবহিত করেনি। কীভাবে কতজন রোহিঙ্গা সেখানে ফিরে গেছেন, সে বিষয়েও বাংলাদেশ পক্ষকে বিস্তারিত জানানো হয়নি। এ কারণেই এটা নিয়ে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হলে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ও আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো যেত। তা না করে মিয়ানমার পক্ষ  রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় সেখানে ফিরে যাওয়ার দাবি করছে। এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সরকার থেকে ফেরত নেওয়ার দাবির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে, বাংলাদেশ থেকে না-কি দুই শতাধিক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ফেরত গেছেন। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে নিরাপদ পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব মিয়ানমারের। সেটা তারা করেনি বলেই রোহিঙ্গারা ফেরত যাননি।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৯
টিআর/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।