ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাংলাদেশে বিনিয়োগের এখনই সময়: বিশ্ববাসীকে প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৯
বাংলাদেশে বিনিয়োগের এখনই সময়: বিশ্ববাসীকে প্রধানমন্ত্রী

নয়াদিল্লি থেকে: শিক্ষা, প্রকৌশল, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ি শিল্প, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিনিয়োগ করতে ভারতসহ বৈশ্বিক পর্যায়ের উদোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার এখনই উপযুক্ত সময়।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে নয়াদিল্লির তাজমহল হোটেলের দরবার হলে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনে ‘কান্ট্রি স্ট্রাটেজি ডায়ালগ অন বাংলাদেশ’ (সিএসডি) শীর্ষক অংশে বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশের বিশাল বাজার ও উদার সমাজব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই বাংলাদেশকে ৩ কোটিরও বেশি মধ্য ও উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর ‘বাজার’ এবং এক ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে দেখে থাকে।  

বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ বর্তমানে সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এর মধ্যে আছে- বিদেশি বিনিয়োগের আইনি সুরক্ষা, উদার আর্থিক প্রণোদনা (ইনসেন্টিভ), যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিশেষ ছাড়, অবাধ প্রস্থান নীতি, ব্যবসা উঠিয়ে নিতে চাইলে লভ্যাংশসহ সম্পূর্ণ মূলধন উত্তোলন নীতি ইত্যাদি।  

‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ দেশজুড়ে আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। ইতোমধ্যে ১২টি চালু হয়েছে। এরমধ্যে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য বেশকিছু হাই-টেক পার্কও নির্মাণ করা হয়েছে। ’

বাইরের বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত, পশ্চিমে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ বৈশ্বিক ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দারুণ এক অর্থনৈতিক অঞ্চল। আমরা এ অঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে পারি। নিজের ১৬ কোটি ২০ লাখ মানুষের বাইরেও বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের বিশাল একবিশ্ব বাজারের সংযোগকারী হিসেবে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় খাতের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বস্ত্রখাতের বাইরেও বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে উন্নত, জ্ঞানসমৃদ্ধ এক সমাজের দিকে এগিয়ে চলেছে। তাই বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের, বিশেষ করে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের জন্য গতানুগতিক খাতের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা, প্রকৌশল, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ি শিল্প, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিনিয়োগের জন্য এটি উপযুক্ত সময়।  

বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,  গত বছর এইচএসবিসি (আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। এর চাবিকাঠি হলো দুটি। এর একটি হলো- ধর্মীয় সম্প্রীতি, উদার মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িকতাভিত্তিক মুক্ত সমাজ। আরেকটি হলো- আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর দুই তৃতীয়াংশই যুবসমাজ, যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ২৫-এর নিচে। তারা যেমন দক্ষতা অর্জনে তৎপর, তেমনি প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের জন্যও প্রস্তুত।

আগামীতে আরও উন্নত বাংলাদেশের আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আত্মবিশ্বাসী জনগোষ্ঠী, দক্ষ নেতৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে উন্নয়নের পথে চলতে চলতে আমরা ক্রমাগত শিখছি। বাংলাদেশ আপনাদের এক মানবিক রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যার রয়েছে তৎপর ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব। এর সঙ্গে আছে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ভিত্তি। বাস্তববাদী ও উন্মুক্ত অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল জাতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।  
 
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, অন্য অনেক দেশের মতোই আমাদেরও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু আমরা জানি কীভাবে তাকে সুযোগে পরিণত করতে হয়। এ বছর আমাদের অর্থনীতি ৮.১ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির রেকর্ড করেছে।  

‘আমরা দুই সংখ্যার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি। ২০০৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকা)। ’

তিনি বলেন, আমাদের কৃষিখাত আর কেবলমাত্র নিজেদের প্রয়োজনই মেটায় না। স্বয়ংসম্পূর্ণতার বাইরে আমরা চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে চতুর্থ, শাক-সবজি উৎপাদনে পঞ্চম ও অভ্যন্তরীণ মাছ উৎপাদন খাতে চতুর্থ। বিভিন্ন প্রধান শস্য ও ফলমূলের জিনগত উন্নয়নেও (জেনম ডিকোডিং) আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে চারদিনের সরকারি সফরে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও কয়েকটি চুক্তি সম্পাদনের কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৯/আপডেট: ০০৩৭ঘণ্টা
এমইউএম/এইচজে/টিএ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ