ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রাজশাহীর দগ্ধ কলেজছাত্রীকে দেখতে গিয়ে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
‘ এরপরও থানা পুলিশ কী বলেছে? তারা কোনো পরামর্শ দিয়েছিলো কিনা? এটা তদন্ত করে দেখা হবে। আমাদের তরফ থেকে যা করণীয় সব করা হবে। আমাদের একজন প্রতিনিধি মেয়েটার সব সময় খোঁজ-খবর রাখবে। ’
এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমি যেহেতু এর আগেও নারী-শিশু নিয়ে কাজ করেছি। মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে। এসব অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান কমিশন বেটার একটা রেজাল্ট দেখাতে পারবে বলে মনে করছি।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, লিজার শরীরের ৬৩ শতাংশ দগ্ধ হয়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
‘সাধারণত এ ধরনের দগ্ধরা রিকোভারি করে না। আবার অনেক দেরি করেও বার্ন ইউনিটে আনা হয়েছে। দুই ঘণ্টার মধ্যে আনলে চিকিৎসা ভালো দেওয়া সম্ভব। তবুও আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি থাকছে না,’ যোগ করেন তিনি।
এ সময় ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক বিধান সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার অদূরে নিজের গায়ে আগুন দেয় লিজা রহমান নামে ওই কলেজছাত্রী। পরে ওইদিন রাতে তাকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে পুলিশ।
জানা যায়, লিজা রহমান (১৯) রাজশাহীর একটি কলেজে পড়েন। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে। তার বাবার নাম মো. আলম মিয়া।
হাসপাতালে থাকা তার বাবা আলম জানান, মেয়ের আত্মহত্যা চেষ্টার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন তিনি। তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রানীকে বিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, লিজার যখন তিন মাস তখন তার মা মারা যান। তখন লিজাকে একই গ্রামের আব্দুল লতিফের কাছে দত্তক দেন। সেখানেই বড় বেড়ে ওঠেন লিজা।
লতিফের এক ছেলে রয়েছে। তার নাম শিহাব আহমেদ। তিনিও বোনের সঙ্গে হাসপাতালে এসেছেন। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর লিজাকে রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি করা হয়। ওই কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন তিনি।
শিহাব বলেন, সেখানে থাকাকালেই রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে লিজার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার খান্দুরা গ্রামে। পরিবারকে না জানিয়েই তারা চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাইবান্ধা কোর্টে বিয়ে করেন।
‘এরপর বাসা ভাড়া নিয়ে রাজশাহীতেই ছিলেন তারা। কিন্তু বিষয়টা জানাজানি হলে বেঁকে বসেন ছেলের পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় ভেঙে পড়েন লিজা। ’
তিনি বলেন, তাদের বাবা আব্দুল লতিফ বর্তমানে মাদক মামলায় কারাগারে। আর কয়েক দফা সাখাওয়াতের বাড়ি গেলে লিজাকে তারা তাড়িয়ে দেন। সাখাওয়াত কিছুদিন লিজার পক্ষে থাকলেও পরিবারের চাপে সেও দূরে সরে যাচ্ছেন।
‘সেই দুঃখে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে,’ যোগ করেন শিহাব।
এদিকে নগর পুলিশের শাহ মখদুম জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) হেমায়েতুল ইসলাম জানান, বিয়ে করার পর তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে নিচ্ছে না-এমন অভিযোগে লিজা থানায় মামলা করতে এসেছিলেন। এর আগেও দুবার বিয়ে হয়েছে তার। সেগুলোও বিচ্ছেদ ঘটেছে। এসব বিষয় শুনে তাকে থানার পাশে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।
‘কিন্তু কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে ঘুরে আসার কথা বলে সেন্টারের অদূরে ব্যাগে থাকা বোতলের কেরোসিন শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয় দেন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ’
বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কারো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯
এমএ/