ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘রামুর হামলাকারীদের কেউ-ই এখন ভালো নেই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯
‘রামুর হামলাকারীদের কেউ-ই এখন ভালো নেই’

কক্সবাজার: ‘ফেসবুকে কোরআন অবমাননার মিথ্যা গুজব তুলে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা চালিয়েছিল এক দল দুর্বৃত্ত। সেই হামলাকারীদের কেউ-ই এখন ভালো নেই। রামুর মাটিতে আর কোনোদিন এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত করতে পারবেনা।’ 

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের রামু উপজেলার লালচিং-মৈত্রী বিহার কমপ্লেক্সে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের উদ্যোগে রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলার সাত বছর অতিক্রান্তে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।

তিনি বলেন, এখন রামুতে আমরা বিশাল শক্তিশালী কর্মীবাহিনী গড়ে তুলেছি।

এখানকার সম্প্রীতি কেউ বিনষ্ট করতে চাইলে একজনও পালাতে পারবেনা। আমরা সবাই মিলে তাদের প্রতিহত করবো। পাশাপাশি তাদেরকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সেদিনের ঘটনার উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, সেদিন যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছিল, তারা কেউ-ই এখন ভালো নেই। তাদের ছেলে-মেয়েরাও ভালো নেই। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশের স্লোগান- ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। এখানকার সেই সম্প্রীতি আর কাউকে বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না।  

এসময় সম্প্রীতির বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি।

‘দেশ থেকে দূর হয়ে যাক সাম্প্রদায়িকতা, মঙ্গল আলোয় উদ্ভাসিত হোক দেশের সব মানুষ’ এই আহ্বানেই রোববার দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হয়েছে রামু হামলার সাত বছর। একই সঙ্গে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সংঘটিত রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মৈত্রী বিহারের সামনের সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।  

এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বরের সেই ভয়াল ঘটনার সাত বছর অতিক্রান্তে এদিন সকালে আয়োজন করা হয় সংঘদান, অষ্ট উপকরণ দান ও ধর্মসভার। রামু লালচিং-মৈত্রী কমপ্লেক্সের সাদাচিংয়ে বুদ্ধের সামনে অর্ঘ্য দানের মধ্যদিয়ে শুরু করা হয় দিনব্যাপী আয়োজন।  

আয়োজিত সভায় অতি সম্প্রতি উখিয়ার পূর্ববত্না পালং গ্রামে নৃসংশ চার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ এবং নিহতদের জন্য নিরবতা পালন করে পুণ্যদান করা হয়। পাশাপাশি দেশ, জাতী ও বিশ্বশান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়।

অনুষ্ঠিত কর্মসূচিগুলোতে সভাপতিত্ব করেন রামু উত্তর ফারিকুল বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বিজয় রক্ষিত মহাথের। এছাড়া প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব এস লোকজিৎ থের, ধর্মদেশনা করেন ২৯ সেপ্টেম্বর উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব শীল মিত্র মহাথের, উত্তরমিঠছিড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের পরিচালক করুণাশ্রী মহাথের। আয়োজকদের মধ্যে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের সভাপতি কেতন বড়ুয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়াসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের সভাপতি কেতন বড়ুয়া বলেন, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সেই অশুভ দিনে ধ্বংসপ্রাপ্ত পবিত্র বুদ্ধের মূর্তি, বৌদ্ধ বিহার, পবিত্র ত্রিপিটকসহ হারিয়ে যাওয়া সব স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুণ্যদান করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমরা চাই, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের মতো আর কোনো বিভীষিকাময় রাত আর কোনো জাতীর জীবনে না আসুক। পাশাপাশি এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা যাতে আর কোনোদিন না ঘটে, সেজন্য আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উত্তম বড়ুয়া নামে এক বৌদ্ধ যুবকের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে  ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা চালানো হয়। এসময় রামুর ১৮টি বৌদ্ধ বিহার ২৬টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলা লুটপাট ও ভাংচুর চালানো হয় আরও ছয়টি বৌদ্ধ বিহার এবং শতাধিক বসতঘরে। পরদিন (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উখিয়ায় আরও চারটি বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালানো হয়েছে।  

সেই হামলার ক্ষতচিহ্ন মুছতে এক বছরের মধ্যে ১৯টি বৌদ্ধ বিহার পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। সেই ধ্বংস স্তুপের ওপর প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন এসব বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেই হামলার ঘটনারই সাত বছর পূর্ণ হয়েছে আজ।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
এসবি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।