ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যমুনার বুকে ‘পঙ্খীরাজ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
যমুনার বুকে ‘পঙ্খীরাজ’ নৌকায় ধাক্কা দিচ্ছে একটি মেয়ে। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্বে কালিতলা গ্রয়েন বাঁধ অবস্থিত। আর সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা গ্রয়েন বাঁধে গড়ে উঠেছে কালিতলা যমুনা আদর্শ নৌকাঘাট। বৃহৎ এই নৌ-ঘাটের নৌকা ছুটে চলে যমুনা নদীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কালিতলা গ্রয়েন বাঁধে গেলে দেখা যায়, ঘাট পাড়ে যাত্রীবাহী একটি নৌকাকে ধাক্কা দিয়ে পানির গভীরের দিকে ঠেলছে কিছু যাত্রী। এ সময় নৌকার মাঝির মুখে শোনা যায়, আমার পঙ্খীরাজে ধাক্কা দেন ভাই।

মাঝির কথায় কিছু যাত্রী পানিতে নেমে নৌকায় ধাক্কা দেয়।

এ সময় একটি ৬-৭ বছরের মেয়েকেও নৌকায় ধাক্কা দিতে দেখা যায়। শিশু মেয়েটিকে তার নাম জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, আমার নাম মিরা।

মিরার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরা ডাকাতমারা চরে তার নানা বাড়িতে বেড়াতে যাবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই সে নৌকায় ধাক্কা দিচ্ছে।

নৌকায় চলে যাতায়াত।  ছবি: বাংলানিউজ

স্থানীয় মাঝি সামাদ জানান, নদীর পানি কমে যাচ্ছে, আস্তে আস্তে চর পড়ে যাবে। এখন কালিতলা এই নৌ-ঘাটে প্রতিদিন ছোট-বড় সব মিলে ১০০ থেকে ১০২টি নৌকা আসে।

জামথইল থেকে ফিরে মাঝি হেদায়ত আলী বাংলানিউজকে বলেন, কালিতলা এই নৌ-ঘাট থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ চরের বিভিন্ন ঘাটে চলাচল করে। গুটাইল, উলিয়া, মানিকদাইর, ঘাঁগোয়া, জামথইল, মাদারগঞ্জ, পাকুরিয়া, ডাকাতমারা, শংকরপুর, ধারাবর্ষা, টেংরাগুরাসহ আরও চরের ছোট ছোট গ্রামে ছুটে চলে কালিতলা ঘাটের নৌকা।

এসময় জানা যায়, কালিতলা নৌ-ঘাট থেকে জামথল, গুটিয়া, মাদারগঞ্জসহ কিছু ঘাটে যেতে যা সময় লাগে ফিরতে ২-৩ গুণ বেশি সময় লাগে। নদীর স্রোতের উল্টো দিকে যেতে হয় বলে সময়টা তখন বেশি লাগে।

নৌকা তাদের ভরসা।  ছবি: বাংলানিউজ

আমজাদ, আলী জাসান, জামরুল, গিয়াস উদ্দিনসহ আরও কিছু মাঝির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, কালিতলা থেকে মাদরগঞ্জ, জামথইল, ডাকাতমারার ভাড়া প্রতি ১ জন ৪০ টাকা, গুটিয়া প্রতি ১ জন ১০০ টাকা, মানিকদাইর ও টেংরাগুরা প্রতি ১ জন ৫০ টাকা, মাদারগঞ্জ প্রতি ১ জন ১৫০ টাকা। প্রতিদিন এই ঘাট থেকে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ প্রচুর যাত্রী যাতায়াত করেন।

সারিয়াকান্দির কালিতলা নৌ-ঘাটে দেখা যায় মোটর সাইকেল নৌকায় নিয়ে যাচ্ছে অনেকেই। এ সময় সারওয়ার নামে এক এনজিও কর্মী বাংলানিউজকে জানান, চরের বিভিন্ন গ্রামে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ঋণ প্রদান কাজ সারতেই প্রতিদিন মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন চরে ছোটেন তিনি। মোটর সাইকেলের ভাড়া একজন মানুষের ভাড়া সমতুল্য। তবে নৌকার লোকজন মোটরসাইকেল তোলা-নামার কাজ করে দেয়। এতে কষ্ট লাঘব হয়। বিনিময়ে কিছু টাকা দিতে হয়।

ধাক্কা দিতে হয় যাত্রীদের।  ছবি: বাংলানিউজ

সালমা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ান। কর্মস্থলে প্রতিদিন তাকে নৌকার মাধ্যমে যাতায়াত করতে হয়। নৌকায় ছুটতে ছুটতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তিনি।

নৌকাতে মোটরসাইকেল নিয়ে পার হন যাত্রীরা।  ছবি: বাংলানিউজ

কালিতলা নৌ-ঘাটের পাশেই একটি যাত্রী ছাউনি রয়েছে। এছাড়া গ্রয়েনের ওপর রয়েছে দু’টি শিক্ষার্থী ছাউনি। মানুষ প্রয়োজনে সেগুলোতেও বসে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
কেইউএ/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।