শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়নে বিলম্ব: জনমনে হতাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, অবহেলা বা বেপরোয়া মোটরযান চালানোর কারণে প্রাণহানি হলে চালকের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় মামলা ও তার অপরাধ জামিন অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে এবং বিচারে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
‘মূলত এই আইনে জামিন অযোগ্য ধারা, সাজা ও জরিমানা বাড়ানোর বিধান থাকায় পরিবহন মালিক শ্রমিকরা আইনটি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন। সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিজেই বলেছেন, পরিবহন মালিক শ্রমিকদের আপত্তির কারণে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ’
তিনি বলেন, আমাদের প্রশ্ন, মালিক-শ্রমিকরা কী সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? নিশ্চয়ই না। তাহলে সরকার তাদেরকে কেন আশকারা দিচ্ছে? পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সম্ভবত নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে রাখতে বা ভাবতে পছন্দ করেন। তারা সব সময় জোর করে, ধর্মঘটের মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় করতে চান। এটা অত্যান্ত দুঃখজনক আচরণ।
সাইদুর রহমান আরও বলেন, পৃথিবীর সব দেশে ইন্সুরেন্স কোম্পানির মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘনায় ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পান। বাংলাদেশে মোটরযান অর্ডিনেন্স অ্যাক্ট ১৯৮৩-তে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে এই সুবিধা প্রাপ্তির বিধান ছিল। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত কেউ কোনোদিন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন এমনটি শোনা যায়নি। অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোনো ব্যবস্থাই করা হয়নি।
‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে থার্ড পার্টির ক্ষতিপূরণ বিমার বিধানটি বিলোপ করে ফার্স্ট পার্টি বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই আইনে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য একটা ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই ফান্ড গঠন ও পরিচালনায় যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে, তা গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে উৎসাহিত করবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। আমরা আইনে থার্ড পার্টির ক্ষতিপূরণ বিমা বাধ্যতামূলক করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। ’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন ও মো. শাহজাহান সিদ্দিকী প্রমুখ।
মিজানুর রহমান খান বলেন, সব জেলায় আমাদের এই মেসেজটি পৌঁছানো খুবই জরুরি যে, যারা দুর্ঘটনার শিকার হবেন তারা যেন অন্তত জেলা আদালতে গিয়ে মামলা করেন। ভারতে সড়ক দুর্ঘটনা আইনে নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার রুপি ও গুরুতর আহতদের সাড়ে ১২ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান আছে। আমাদের দেশে অন্তত এতটুকু বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
এমএইচ/এসএ