ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিদ্যুতের যোগান দিচ্ছে কাপ্তাই সৌরবিদ্যুৎ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
বিদ্যুতের যোগান দিচ্ছে কাপ্তাই সৌরবিদ্যুৎ বিদ্যুতের যোগান দিচ্ছে কাপ্তাই সৌরবিদ্যুৎ। ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: রাঙামাটির কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্থাপিত দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ৬ মে থেকে বাণিজ্যিকভাবে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর লক্ষে প্রথমবারের মতো রাঙামাটিতে ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট সোলার পিভি গ্রিড কানেকটেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগে নিয়েছিলো সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় জেলার কাপ্তাই উপজেলার জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২২ একর নিজস্ব জায়গায় স্থাপিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন এবং এডিবির সহযোগিতায় ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পটির কারিগরি কাজে সহযোগিতা করেছেন, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেট টি ই করপোরেশন কোম্পানি।

প্রকল্পটি তৈরি করতে মোট ব্যয় করা হয়েছে ১১১ কোটি ২০ লাখ টাকা। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ মেগাওয়াট ডিসি ও ৬ দশমিক ৬৩ মেগাওয়াট এসি। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির মূলকাজ শেষ হয়েছে।  

প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে প্রায় ৬ দশমিক ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আগামী দুই বছর পর্যন্ত চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেট টি ই করপোরেশন কোম্পানি প্রকল্পটির কারিগরি সহায়তা প্রদান করে যাবে।
বিদ্যুতের যোগান দিচ্ছে কাপ্তাই সৌরবিদ্যুৎ।  ছবি: বাংলানিউজএদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

কাপ্তাই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন এবং এডিবির সহযোগিতায় ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে আমরা কাজটি শুরু করি।

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি সরকার চেয়ছিলো দেশে ভিন্ন উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সৌরবিদ্যুৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

বর্তমানে প্রকল্পটি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬ দশমিক ৭ মেগাওয়াট ডিসি ও ৬ দশমিক ১০ মেগাওয়াট এসি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। পরিকল্পনাটি গ্রহণ করে সরকার সফল হয়েছে বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটিতে উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রজেক্টে ব্যবহার করা হবে। আর অবশিষ্ট বিদ্যুৎ কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ড. এ টি এম আব্দুজ্জাহের বাংলানিউজকে বলেন, পরীক্ষামূলভাবে স্থাপিত কাপ্তাই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন হয়েছে। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন শক্তি যোগান হয়েছে। দেশের মানুষ এ কেন্দ্রের মাধ্যমে আরও বিদ্যুৎ পাবে।  

ব্যবস্থাপক আরও বলেন, বর্তমান সরকার এ প্রকল্প অনুসরণ করে কাপ্তাই হ্রদে একটি ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গড়ে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। যদি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭.৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপান করা যায় তাহলে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সৌরবিদ্যুৎ মিলে মোট ২৫৭.৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

কাপ্তাই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, দেশের প্রথম এ প্রকল্পটি দেখাশুনার জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেট টি ই করপোরেশন কোম্পানির আটজন কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রকল্পটির দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, চীনা কোম্পানিটি চলে গেলে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির দায়িত্ব গ্রহণ করবে। প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চীনা কোম্পানির অধীন আমাদের ১২জন কর্মচারী দুই বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিট প্রতি কত খরচ পড়ছে- জানতে চাইলে এ প্রকৌশলী বলেন, আমরা যেহেতু পরীক্ষা আকারে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছি। সেহেতু এখনো কত খরচ পড়ছে তা হিসাব করা হয়নি। কিছুদিন পর আমরা হিসাব করবো ইউনিট প্রতি আমাদের কত খরচ পড়ছে।

প্রকল্পটিকে দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রকল্পটি যে স্থানে করা হয়েছে সেই জায়গাটা নিচু। কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেলে যে কোনো মূহর্তে প্রকল্পের স্থানটি ডুবে যেতে পারে। এজন্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের চারপাশে রিটার্নি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।  

এছাড়া ঝড়-তুফানের হাত থেকে প্যানেলগুলোকে রক্ষা করতে স্টিলের হুক দেওয়া হয়েছে। হুকগুলো ব্যবহার করার কারণে তুফানে প্যানেলগুলো ছিটকে পড়বে না।

২২ একর জায়গা জুড়ে তথা পুরো প্রকল্পে ২৪ হাজার প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮,২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।