ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৮০১ প্রতিমা নিয়ে শিকদার বাড়িতে সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
৮০১ প্রতিমা নিয়ে শিকদার বাড়িতে সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা

বাগেরহাট: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যেমন আনন্দে মেতে উঠেন, তেমনি অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। 

আর দুর্গাপূজাকে ভিন্ন মাত্রা দেয় বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির পূজামণ্ডপ। প্রতিবছর প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের সেরা বা বৃহত্তম মণ্ডপ তৈরি হয় শিকদার বাড়িতে।

কেউ কেউ অবশ্য এ মণ্ডপকে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় মণ্ডপ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে দেশের সব থেকে বড় আয়োজন করছে শিকদার বাড়ির পূজামণ্ডপ। এত বড় আয়োজন করতে মোটামুটি সারাবছরই বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি ও কাজের মধ্যে থাকতে হয় আয়োজকদের।

গত ১ মে ১৫ জন শ্রমিক নিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন প্রধান ভাস্কর (কারিগর) বিজয় কৃষ্ণ বাছাড়। সেই থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ৮০১টি প্রতিমা তৈরির জন্য। এবার ৮০১টি প্রতিমার মাধ্যমে সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন ভাস্কররা। ইতোমধ্যে প্রতিমার প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। বাকি আছে রং ও সাজসজ্জার। সে কাজও করছেন নিপুন হাতে। প্রতিবছরের মত এ বছরও রয়েছে শিকদার বাড়ির পুকুরের মধ্যে প্রতিমার আকর্ষণ। পুকুরে এবার অষ্টসখী নিয়ে কৃষ্ণের নৌকা বিলাসের প্রতিকৃতি দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা।

.প্রতিমা তৈরির শ্রমিক বিথেন বাছাড়, সঞ্জিত বাছার ও ইমন বাছার বলেন, গত ১ মে বিজয় দার সঙ্গে এখানে এসেছি। সবাই মিলে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি। বিশ্রামের তেমন কোনো সময় না থাকলেও দেবতাদের কাজ করতে পেরে ভালোই লাগছে। আর এত বড় মণ্ডপের কাজ এ বাড়িতে ছাড়া অন্য কোথাও করিনি। তাই কাজে কোনো ক্লান্তি মনে হয় না। আশা করি, পূজা শুরুর দশ দিন আগে সব কাজ শেষ হবে আমাদের।

শিকদার বাড়ির মণ্ডপের প্রধান ভাস্কর বিজয় কুমার বাছাড় বলেন, প্রতিবছরের মত এ বছরও আমরা মানুষকে নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবো। এ বছর ৮০১টি প্রতিমার মাধ্যমে সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এরমধ্যে থাকবে মানুষ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে! কার্তিক, গণেশ, নারদ এরা কীভাবে জন্ম নিল। নারায়ণ ব্রোহাও রূপ কীভাবে পেল। নারায়ণ চক্র পেলেন কীভাবে, তা আমরা তুলে ধরেছি। অন্যবার থেকে এ বছর দর্শকদের আরও বেশি ভালো লাগবে বলে জানান তিনি।

প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি রয়েছে প্যান্ডেল ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার জন্য স্টেজের সাজসজ্জা। পূজাকে আকর্ষণীয় করতে সাজানো হয় মণ্ডপ ও আশপাশের স্থানকে। আর কয়েক বছর ধরে এ সাজসজ্জার কাজ করে থাকেন মাগুরার বৈশাখী ডেকারেশন।

বৈশাখী ডেকারেশনের সাজসজ্জা বিভাগের প্রধান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পাঁচ মাস ধরে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছে এ মণ্ডপের বাহ্যিক সাজসজ্জার জন্য। আশা করি, পূজার আগে সব সাজসজ্জা আয়োজকদের পছন্দমত করে দিতে পারবো। অষ্টসখী নিয়ে কৃষ্ণের নৌকা বিলাসের প্রতিকৃতি।  ছবি: বাংলানিউজএসবের পাশাপাশি এ মণ্ডপে থাকছে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, দর্শনার্থীদের আপ্যায়ন, সরকারি নিরাপত্তার ব্যবস্থার পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন। এ মণ্ডপকে ঘিরে পূজার পাঁচ দিন হাকিমপুর যেন উৎসবের নগরে পরিণত হয়। দেশ-বিদেশের অগণিত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয় হাকিমপুর।

আগামী ৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভ সূচনা হবে। দেবীদুর্গা এ বছর ঘোড়ায় চড়ে আসবেন আর যাবেনও ঘোড়ায়। ৪ অক্টোবর থেকে ৮ অক্টোবর দুর্গাপূজা চলবে।

গত কয়েক বছর ধরে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের সিকদার বাড়িতে। আট বছর ধরে লিটন সিকদার নামে এক ব্যবসায়ী মহাধূমধামে এ আয়োজন করে আসছেন। ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এ মণ্ডপের। প্রতিবছরই বাড়তে থাকে প্রতিমার সংখ্যা। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে প্রতিমার সংখ্যা ছিল ৬৫১টি। ২০১৭ সালে তা পৌঁছায় ৭০১টিতে।

আয়োজক লিটন শিকদার বলেন, আপনারা জানেন, এ বছর আমার বাবা মারা গেছেন। বাবার ইচ্ছে ছিল গেল বছরের থেকে ১০০টি প্রতিমা বেশি করা হোক। সেই অনুযায়ী এ বছর ৮০১টি প্রতিমার মাধ্যমে আমরা সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এ বছর দর্শনার্থীরা অন্য বছর থেকে ভিন্ন ধরনের দেবদেবীর প্রতিমা দেখতে পাবেন। আশা করি, দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হবেন।  .বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, শিকদার বাড়িতে প্রতিবছরই বড় আয়োজন হয়ে থাকে। যার ফলে ভক্ত ও দর্শনার্থীও বেশি থাকে। মণ্ডপ, ভক্ত ও দর্শানার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।