ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাড়ে তিন কোটি টাকার সেতুর সুবিধাবঞ্চিত ২১ গ্রামের মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
সাড়ে তিন কোটি টাকার সেতুর সুবিধাবঞ্চিত ২১ গ্রামের মানুষ

নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চলে তিন কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদীর উপর নির্মিত হয়েছে দড়িবালুয়াকান্দি-বরদাকান্দি সেতু। কিন্তু সেতু ব্যবহারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ২১টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ।

বিপুল পরিমাণ মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই সেতু। কিন্তু সেতুতে চলাচলের জন্য যে সড়কটি রয়েছে, সেটি অপরিকল্পিত।

ফলে দুর্ভোগ পোহানোসহ প্রতিনিয়ত নানা দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে সেতুর সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণ না করায় নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিত সড়ক। আর অতি বর্ষণের ফলে ভেঙে গেছে সড়কের বিভিন্ন অংশ।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরার আমিরগঞ্জ ও চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম মেঘনা নদীর উপর নির্মিত এই সেতু। গ্রামবাসীর দীঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে তিন কেটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে মেঘনার শাখা নদীর উপর নির্মাণ করা হয় ১৪০ মিটার দড়িবালুয়াকান্দি-বরদাকান্দি সেতু। আর এই সেতুতে যাতায়াতের জন্য ৩৮ লাখ ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৪১০ মিটার ইটের সড়ক। কিন্তু সেতুতে ওঠার জন্য পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ না করায় এই ব্রিজ এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় এবং সড়কের পাশে সুরক্ষা দেয়াল তৈরি না করায় সড়কটি ভেঙে গেছে। রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া, বাজারের মালামাল পরিবহনসহ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দুর্ভোগ লাঘবে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসের পরও দাবি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

দড়িবালুয়াকান্দি-বরদাকান্দি সেতু।

নরসিংদী সরকারি কলেজে অর্নাসের শিক্ষার্থী রনি মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সেতু নির্মাণের পর ভেবেছিলাম আমাদের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমবে। আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবো। কিন্তু সেতুর সঙ্গে পরিকল্পিত সেতু না থাকায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যানবাহন সেতু পার হতে গিয়ে প্রায়ই ছোট-বড় দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

হাসনাবাদের বাসিন্দা রাসেল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, জমিঅধিগ্রহণ না করেই সেতুর অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। আর নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় ভেঙে গছে সেতুতে চলাচলের ইটের সড়কটি। ফলে শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, রোগীসহ সবাইকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সিএনজি চালক জামাল মিয়া বলেন, আমরা গাড়ি নিয়ে সরাসরি সেতুতে উঠতে পারি না। গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে সেতুতে উঠাতে হয়। অনেক সময় সেতুতে উঠা ও নামার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। যার কারণে সেতু দিয়ে চলাচলের সময় যাত্রীরা ভয় পায়।

অটোরিক্সা চালক আলাউদ্দিন বলেন, সেতু থেকে নামার সময় আমার গাড়ি উল্টে যায়। যার কারণে আমি গুরুতর আহত হই। তিনদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

হাসনাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, সেতুর সঙ্গে সড়কের ঢালটি সঠিকভাবে নির্মাণ করা হয়নি। এতে গাড়ি উঠা-নামার সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থ্ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান সরকার বাংলানিউজকে জানান, জমি অধিগ্রহণ করে পরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণ করা হলে সাধারণ মানুষ সেতুর সুফল ভোগ করতে পারবে। আশা করছি, প্রশাসন এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যা সমাধান করবে।

রায়পুরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী শামীম ইকবাল মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, পল্লী উন্নয়ন ও স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মেঘনার শাখা নদীর উপর এই সেতু নির্মাণ করা হয়।  কিন্তু প্রকল্পে সড়কের জন্য কোনো জমি অধিগ্রহণের কোনো প্রস্তাবনা ছিল না। ক্ষতিগ্রস্থ সড়কটি এই অর্থ বছরেই জমি অধিগ্রহণ করে পুনরায় নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।