ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চার দেয়ালে বন্দি সাদেকুলের জীবন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯
চার দেয়ালে বন্দি সাদেকুলের জীবন চার দেয়ালে বন্দি সাদেকুলের জীবন। ছবি: বাংলানিউজ

নওগাঁ: গ্রামের রাস্তার পাশে একটি ইটের তৈরি ঘরে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার ভবানীপুর মোবারক পাড়া গ্রামের সাদেকুল ইসলামকে। তিনি বন্দি ঘরের ভেতর থেকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছেন এদিক-ওদিক।

৩৮ বছরের এ যুবক গত তিন বছর ধরে এভাবে শিকলে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ওই গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাদেকুল।

পাশের গ্রামের ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি।

ইটের চার দেয়ালের মধ্যে একটি চৌকি আর ওই ঘরের মধ্যেই রয়েছে প্রাকৃতিক কাজ কর্ম সাড়ার শৌচাগার। এর মধ্যেই সিমেন্টের তৈরি একটি চারীতে রাখা হয়েছে পানি যা দিয়ে খাওয়া ও গোসলের কাজ সারেন সাদেকুল। ঘরের সামনের দিকে লোহা গ্রিলের দরজার মাঝে বরাবর গ্রিল কাটা রয়েছে, ওই কাটা অংশের মধ্য দিয়েই খাবার পরিবেশন করা হয় তার জন্য।

সাদেকুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, বাড়িতে ঠিকমত ভাত খেতে দেয় না, তাই অন্য মানুষের বাড়িতে ভাত চেয়ে খাই, মানুষের সঙ্গে একটু দুষ্টমি করি তাই আমার ভাই শেরেকুল আমায় বন্দি করে রেখেছে।

সাদেকুলের সঙ্গে কথা বলার সময় এগিয়ে আসেন কয়েকজন প্রতিবেশী। তারা জানান, তিন বছর ধরে এ অবস্থায় রাখা হয়েছে তাকে। প্রথম দিকে তার কথা বার্তায় কিছুটা এলোমেলো রয়েছে। তবে তার আচরণে মানুষের কোনো ক্ষতি হতো না। ক্ষুধা লাগলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ভাত চেয়ে খেতো। তবে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি অবস্থায় থাকার কারণে কিছুটা পাগলের মতো আচরণ দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে।

সাদেকুলের ভাই শেরেকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে অসুস্থ হয় আমার ভাই। এরপর অনেক জায়গায় চিকিৎসা করে কোনো ফল হয়নি। এমনকি মানষিক হাসপাতালেও ভর্তি করিয়েছিলাম সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে পাগল বলতে পারে না। এরমধ্যে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এক ছেলে জন্ম নেবার পর প্রায় এক যুগ আগে তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে গেছেন।  

তিনি বলেন, আমার ভাই মাঝে মাঝে এলাকার লোকজনকে মারধর করতেন তাই তাকে এভাবে রাখা হয়েছে।

সাদেকুলের ভাই শেরেকুলের এসব কথা মানতে নারাজ স্থানীয় মানবধিকার কর্মী। এবিষয়ে স্থানীয় আইন সহায়তা কর্মসূচির এইচ আর এল এস অফিসার শাহানা সুলতানা বাংলানিউজকে জানান, ওই গ্রামের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে কয়েক বছর আগে সাদেকুল তার মায়ের মাথায় আঘত করেছিল। সেই ক্ষোভে এবং সম্পত্তি দখল করতেই বড় ভাই শেরেকুল তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। সাদেকুলের দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমনটি গ্রামের কেউ বলতে পারেনি। দীর্ঘ দিন তাকে বন্দি করে রাখার কারণে মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তিনি।

এ বিষয়ে রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমরা বিষয়টি জানার পর সাদেকুলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।