ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছোলমাইদে পানির জন্য হাহাকার, দুর্বিষহ জনজীবন

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
ছোলমাইদে পানির জন্য হাহাকার, দুর্বিষহ জনজীবন

ঢাকা: এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ওয়াসার পানি সরবরাহ না থাকায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন রাজধানীর ভাটারা থানাধীন ছোলমাইদ উত্তরপাড়ার হাজারো বাসিন্দা। এই এলাকাবাসীর জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও নেয়নি ঢাকার পানি সরবরাহ ও পয়ঃ নিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। 

সম্প্রতি এলাকাটিতে গিয়ে দেখা যায়, ওয়াসার পানি না পেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে দিন পার করছেন বাসিন্দারা। বিশেষ করে গৃহস্থালি কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বাসাবাড়ির গৃহিণীরা।

রান্নার জন্য সামান্য পানিটুকু যোগাড় করতে নাভিশ্বাস উঠছে তাদের। পানির সংকটের কারণে শিশুদের নিয়েও ভুগতে হচ্ছে মায়েদের।

সেজন্য বালতি, ড্রামসহ বিভিন্ন ধরনের পাত্র নিয়ে দূরের এলাকা থেকে পানি নিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। পানি টানার এই মিছিলে নারী পুরুষের পাশাপাশি আছে শিশুরাও। কেউ কেউ পানি কিনে নিয়ে আসছেন বাড়িতে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল লোকজন কিনছেন ওয়াসার পানি। সরবরাহ করছেন ওয়াসার ট্রাক থেকে। তবে তাতেও যে শান্তি ও স্বস্তি পাচ্ছেন না, সে বিষয়টি পরিষ্কার তাদের কথাতেই।  নষ্ট পাম্প দিয়ে পানি তুললে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা-মাটি উঠে আসে।  ছবি: জিএম মুজিবুরস্থানীয় বাসিন্দা এবং গৃহিণী সামসুন্নাহার বাংলানিউজকে বলেন, সাতদিনের ওপরে হয়ে গেল আমাদের পানি নাই। কাপড় ধোয়া, গোসল, এসব তো বাদ। রান্না করার মত পানিও নেই। রান্নার জন্য প্রতিদিন কিছু পানি দোকান থেকে কিনে আনি। কিন্তু এভাবে কতদিন? 

এলাকার আরেক বাসিন্দা এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা প্রণব কুমার বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মত এলাকায় এভাবে দিনের পর দিন পানি নেই, এটা হতে পারে না। বারংবার ওয়াসার লোকেদের বলার পরেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। দূরের এলাকা থেকে কোনো পরিচিতজনের বাসা থেকে অথবা মসজিদ থেকে পানি নিয়ে আসতে হচ্ছে। অথবা মাঝে মাঝে পানি কিনে নিতে হচ্ছে। খুবই দুর্বিষহ দিন যাচ্ছে আমাদের। পানি ছাড়া একদিনও কি স্বস্তিতে কাটানো যায়?

মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ওয়াসার শিগগির পদক্ষেপ কামনা করেন এলাকার বাসিন্দা রীনা চৌধুরী।

জানা যায়, ভাটারা এলাকার জন্য ওয়াসার পানির পাম্প আছে দুইটি। জোন-৮ এর আওতাধীন এই পাম্প দুইটির একটি সপ্তাখানেকের বেশি সময় ধরে নষ্ট হয়ে আছে। সেই পাম্প দিয়ে পানি তুললে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা-মাটি, এসব উঠে আসে। তাই বন্ধ আছে পাম্পটি। আর সে কারণেই ভোগান্তি এই এলাকার হাজারো বাসিন্দার।  কলসি-বালতি-ড্রামসহ বিভিন্ন ধরনের পাত্র নিয়ে দূরের এলাকা থেকে পানি নিয়ে আসছেন ছোলমাইদের বাসিন্দারা।  ছবি: জিএম মুজিবুরওয়াসার নির্লিপ্ততায় বিরক্ত খোদ স্থানীয় কাউন্সিলর। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পরেশনের (ডিএনসিসি) ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালী বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রতিদিন ওয়াসায় যাচ্ছি বা যোগাযোগ রাখছি। ওয়াসা কোনো কাজ করে না। তাদের এখানকার যে ইনচার্জ, একদিন এসে এখানকার মানুষের কষ্ট দেখেছেন? পরিস্থিতি দেখেছেন? দেখেন নাই। তারা (ওয়াসা) আমার কাছে জায়গা চায় নতুন পাম্প বসানোর জন্য, কিন্তু জায়গা তো মুখের কথা না যে, চাইলেই পাওয়া গেল। আর নতুন পাম্প তো পরে, আগে তো পুরনোটা ঠিক করতে হবে। সেটা কেন তারা ঠিক করে না? কাজই তো শুরু করে নাই। কাজ শুরু করলেও তো ৪-৫ দিন লাগবে।  

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সাফাই গেয়েছেন ওয়াসার অঞ্চল-৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এমরানুল ইসলাম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় দুইটি পাম্প। একটি নষ্ট। সেটি দিয়ে পানি উঠালে মাটি-পাথর উঠে আসে। তাই এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ৫-৬ দিনের মধ্যে পাম্পটি মেরামত করা হয়ে গেলে ওই এলাকায় পানি সরবরাহ আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।  

এমরানুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা ওই এলাকার জন্য আরেকটি পাম্প স্থাপন করতে চাই। এজন্য ওই এলাকার কাউন্সিলরের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি একটা জমির জন্য। জমি পেলেই পাম্প বসাবো।  

জমির বিষয়ে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালী বলেন, নতুন পাম্প বসানোর কাজ যদি আজও শুরু করে তাহলেও সেটি থেকে পানি সরবরাহ করতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। তার আগে এই সমস্যার তো সমাধান করতে হবে। আর আমি ইতোমধ্যেই ভাটারায় দেড় কাঠা জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। রাস্তার কিছু কাজ আছে। সেটি হয়ে গেলেই ওয়াসা পাম্প বসানোর কাজ শুরু করতে পারবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।