ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শতকোটি টাকা লুটে শ্রমিকবেশে আত্মগোপন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
শতকোটি টাকা লুটে শ্রমিকবেশে আত্মগোপন আটক প্রতারক ইব্রাহিম আলী

ঢাকা: ইটভাটায় বিনিয়োগে উচ্চহারে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন শতকোটি টাকা। ১১০টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হয়েও দীর্ঘদিন ছিলেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। রাজশাহী থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করলেও গ্রেফতার এড়াতে শ্রমিকবেশে কক্সবাজারে আত্মগোপনে ছিলেন এই প্রতারক।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে একটি সিম একবারের বেশি ব্যবহার করতেন না। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি তার।

তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ইব্রাহিম আলী (৪২) নামে এই আসামির অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অবশেষে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম ১৪-১৫ সাল থেকে প্রতারণা শুরু করেন। সে সাধারণত তিনভাবে প্রতারণা করে জনসাধারণের কাছ থেকে প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

প্রথমত, বিভিন্ন ইটভাটায় বিনিয়োগে বিপুল পরিমাণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। দ্বিতীয়ত, অফ সিজনে কমদামে ইট সরবরাহের কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতেন এবং তৃতীয়ত, অধিক সুদের বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।

এক্ষেত্রে তিনি ব্যাংকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি সুদ দেওয়ার কথা বলতেন এবং কয়েকজনকে ডেকে সুদের টাকা দিয়ে সহজেই মানুষের বিশ্বস্ততা অর্জন করেছেন। একপর্যায়ে প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পলাতক হন প্রতারক ইব্রাহিম।

এসএসপি কামরুজ্জামান বলেন, রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় ও আদালতে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ১০৯টি মামলা দায়েরের তথ্য পেয়েছি। সবক’টি মামলাতেই ওয়ারেন্টভুক্ত প্রধান আসামি ইব্রাহিম। এছাড়া, ঢাকার লালবাগে প্রায় আট কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে শহীদুল ইসলাম নামে একজন ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেন।

প্রতারক ইব্রাহিমকে দীর্ঘদিন ধরেই খোঁজার কথা জানিয়ে সিআইডির এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার এড়াতে তিনি তার মোবাইলে একটি সিম একবারের বেশি ব্যবহার করতেন না। তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সহায়তায় অবশেষে কক্সবাজারে তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়।

কিন্তু সেখানে তিনি শ্রমিকবেশে অবস্থান করছিলেন। অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত এলাকা থেকে শ্রমিকদের মাঝখান থেকে প্রতারক ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করা হয়।

ইব্রাহিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এসএসপি কামরুজ্জামান আরও বলেন, প্রতারণার টাকা দিয়ে তিনি কয়েকটা ট্রাক কেনেন, কিছু দোকান ও জমি কেনেন এবং ভাড়ায় গার্মেন্টস চালু করেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তার সব ট্রাক ও ব্যবসা শ্বশুর, শ্যালক এবং এক ভগ্নিপতি দেখাশোনা করতেন।

তাদের তিনজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা গেলেও ইব্রাহিম ছিলেন পলাতক। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ইব্রাহিমকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ডে পেলে প্রতারণার অর্থ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।