ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি রান্না করছেন পানিবন্দি এক নারী। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের বর্ষণে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি। ফলে লালমনিরহাটের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটর। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সে.মি) বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে হঠাৎ বাড়তে থাকে তিস্তার পানিপ্রবাহ। যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার রাত ১টায় বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৫/৭ হাজার পরিবার। কিছুদিন আগে শুকিয়ে যাওয়া মৃত প্রায় তিস্তা আবারও ফুলে ফেঁপে উঠে ফিরে পায়  চিরচেনা রূপ। হেঁটে পারি দেওয়া তিস্তায় চলতে শুরু করে নৌকা। হাঁকডাক বেড়ে যায় মাঝি মাল্লাদের। কর্মব্যস্ততা দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ের জেলে পরিবারে।  

অপরদিকে পানিপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের  প্রায় ৫/৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

জন্মলগ্ন থেকে এ নদী খনন না করায় পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হয়ে ওঠেছে। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে সামান্যতেই তিস্তার পানিপ্রবাহ লোকালয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। ডুবে যায় ঘরবাড়ি ফসলি জমি। কড়াল গ্রাসে প্রতিনিয়ত ভেঙে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে তিস্তায় পানি বাড়লেই বন্যা ও ভাঙনের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষ। তাই দ্রুত তিস্তা নদী খনন করে উভয় তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান নদীপাড়ের মানুষ।

হঠাৎ তিস্তায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি ও আগাম আমনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেক কৃষকের সবজি ও আমন ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সলেডি স্প্যার-২ এ খোলা আকাশের নিচে পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করছেন মমেনা বেওয়া (৭০)।  

তিনি  বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাতে সন্তানদের আগলে রেখে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। দুপুর থেকে পানি কমতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন বলেও জানান এ বৃদ্ধা।

হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী গ্রামের কৃষক আশরাফুল বাংলানিউজকে জানান, বন্যার পানি দ্রুত নামতে শুরু করায় দুর্ভোগ থেকে কিছুটা রক্ষা হচ্ছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে আমন ক্ষেতে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে পানি না কমে যদি আবারও বেড়ে যায় তবে ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান এ কৃষক।

আদিতমারীর তিস্তা চরাঞ্চলের বাবুল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, হঠাৎ বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ওই গ্রামের সব পুকুর ডুবে যাওয়ায় তাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তার নিজের পুকুরের প্রায় লাখ টাকার মাছ বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে বলে দাবি করেন এ মাছ চাষি।

গোবর্দ্ধন স্প্যার বাঁধে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বম্ভর রায় বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার পানি বেশি সময় থাকলে ধানের ক্ষতি হত। কিন্তু পানি দ্রুত নেমে গেলে এ বন্যায় আমনের বেশ উপকার হবে। বন্যার পানিতে পোকামাকড় মরে যাওয়ার পাশাপাশি পলি পড়ে ধানক্ষেতের উপকারই হবে। পানি নেমে গেলে ধান গাছে লেগে থাকা কাদা মাটি কচুরীপানা সড়িয়ে দিতে কৃষকদের পরামর্শ দেন তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার পানি স্থায়ী না হওয়ায় খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবুও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে চাহিদা দিলে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হবে। কেউ ত্রাণের জন্য চাহিদা না দেওয়ায় বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা ত্রাণ তহবিলে ১৪৫ মেট্রিকটন জিআর চাল ও ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানিপ্রবাহ সোমবার রাত থেকে বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১টায় বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর  দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বুধবার সকালে থেকে কমতে শুরু করে পানি। দুপুরে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়। ব্যারেজ রক্ষার্থে  সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ভারতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বুধবার বিকেলের মধ্যে তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপদসীমার অনেক নিচে নেমে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।