ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কক্সবাজারে এক উপজেলায় ৬০০ রোহিঙ্গা ভোটার!

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
কক্সবাজারে এক উপজেলায় ৬০০ রোহিঙ্গা ভোটার!

কক্সবাজার: নির্বাচন কমিশনের অনুমতিবিহীন কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে একটি প্রতারক চক্র। ইতোমধ্যে চক্রটি কক্সবাজারের কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেসে সংযুক্ত করেছে।

এরমধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলাতেই অন্তত ৬০০ রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন অফিস। এদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তিন জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা বাদী হয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর- জিআর-৯৯১/১৯, থানা মামলা নম্বর-৪১/১৯)। এ মামলায় পাঁচ রোহিঙ্গাকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ‘অজ্ঞাতনামা তালিকায়’ রাখা হয়েছে।

এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন- কক্সবাজার পৌরসভার পশ্চিম নতুন বাহারছড়ার বাসিন্দা ইউসুফ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম নুরু (৪২), মৃত শহর মুল্লুকের ছেলে ইয়াসিন (৩৭), টেকনাফ নয়াপাড়া মুছনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকের আবুল হাশেমের ছেলে আব্দুল্লাহ (৫৩), ওবায়দুল্লাহ (৩৭) এবং কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ খোদাইবাড়ি এলাকার মৃত ওলা মিয়ার ছেলে শামসুর রহমান (৫০)। এজাহারের প্রথম তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানাগেছে, সম্প্রতি নাগরিক তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি যাচাই করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। চক্রটি ইতোমধ্যে অন্তত ৬০০ রোহিঙ্গাকে অবৈধভাবে নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেসে সংযুক্ত ও কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিবন্ধনভুক্ত করেছে।

কক্সবাজারের বাকি সাত উপজেলার নাগরিক তালিকাও যাচাই করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ধারণা করছে, রোহিঙ্গারা চিহ্নিত ও সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সঙ্গে হাত করে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শুধুমাত্র কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৫৯৭ জন রোহিঙ্গা অবৈধ পন্থায় ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা বাংলানিউজকে জানান, ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ এর ১৮/১৯ লঙ্ঘন করায় বাংলাদেশে ভোটার হওয়া এসব রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মামলার বাদী শিমুল শর্মা জানান, অভিযুক্তরা চট্টগ্রাম শহরের অজ্ঞাতনামা লোকজনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের অবৈধ পন্থায় নানা কৌশলে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক্স জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন করে আসছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্রে প্রতারকচক্রের অপরাধের বিষয়ে জানতে পারে নির্বাচন কমিশন। এরপর অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।

নির্বাচন অফিসের সার্ভারের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের নাম, ঠিকানা নির্বাচন কমিশনের ভোটার নিবন্ধন তথ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের ভোটার নিবন্ধন ল্যাপটপ আইডির সঙ্গে মিল নেই।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা টাকার বিনিময়ে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

এর আগে গত ১২ মে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নুরু ও মো. ইয়াসিন নামে দুই জন শহরের নতুন বাহারছড়া জামে মসজিদের সামনে আব্দুল্লাহ, ওবায়দুল্লাহ ও শামসুর রহমানকে ভোটার নিবন্ধুনের জন্য ১৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। এরপর তাদের ছবি তুলে ভোটার নিবন্ধনের জন্য চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদেরকে একটি কক্ষে রাখা হয়; যেখানে পূর্ব থেকেই আরও অনেক রোহিঙ্গা অবস্থান করছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
এসবি/এইচএমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad