ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রেললাইন যাবে, তাই তড়িঘড়ি স্থাপনা নির্মাণ

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯
রেললাইন যাবে, তাই তড়িঘড়ি স্থাপনা নির্মাণ রেললাইন যাবে, তাই তড়িঘড়ি স্থাপনা নির্মাণ। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: নদী-খাল-বিল আর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চল এবার রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে। তাই দক্ষিণের জনপদের মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছে রেল সংযোগের। 

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শুরু হয়ে বরিশালের উপর দিয়ে রেল সংযোগ যাবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রা সমুদ্র বন্দরে; সেখান থেকে সরাসরি রেললাইন যাবে পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটায়।  

জানা গেছে, বরিশালের মানুষের স্বপ্নের রেলপথ যোগাযোগ স্থাপন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে।

রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রকল্প পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো।

তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাঠ পর্যায়ে এ মতবিনিময় ও সম্ভাব্যতা যাচাই জরিপের পর ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের জায়গায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে একাজ যে শুধু সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তরা করছেন তাই নয়। এক কথায় অর্থে-বিত্তে একটু স্বচ্ছল ও প্রভাবশালীরাই করছেন এরকম কাজ।  

আবার অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠছে, চুক্তিতে একজনের জায়গায় অন্য একজন ঘর তুলে দিচ্ছেন। এমনকি সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) আওতায় জমি হলেও কোনো ধরনের প্ল্যান পাস না করিয়ে-ই স্থাপনা তৈরি করছেন অনেকে। যদিও এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের শেখেরহাট সংলগ্ন আলতাব হাওলাদারকে কোনো প্ল্যান পাস না করিয়ে স্থাপনা নির্মাণের ঘটনায় নোটিশ দিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় এক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ নেই ওইভাবে।  

যেমনটি ঘটছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ভরতকাঠি গ্রামে। এ গ্রামেও রেল-লাইনের সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণ করে বিভিন্ন বাড়িতে একটি নম্বর লেখা হয়েছে লাল রং দিয়ে।  আর সেই নির্ধারণের সূত্র ধরেই শুরু হয়েছে এ গ্রামে নতুন স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক।

যারা স্থাপনা নির্মাণ করছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেললাইন প্রকল্প সম্প্রসারণ করলে এসব স্থাপনার জন্য বেশি টাকা বাগিয়ে নিতে পারবেন-সে লক্ষ্যেই এসব কাজ করছেন তারা।  

সরজমিনে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ভরতকাঠি ও বরিশাল নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাশীপুর খানাবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে জমি জরিপের অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে কিছু পাকা স্থাপনা। আবার এসব স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে বাদ যাচ্ছে না চাষাবাদের জমিও।

এ বিষয়ে বিসিসির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, রেল সংযোগে আমার নিজের ১৩ শতাংশ জমি পড়েছে। আমি ২ শতাংশ জমির ওপর একটি টিনসেড ঘর র্নিমাণ করেছি।  

জমি মাপার পর কেন এই ঘর উত্তোলন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি জমিতে এক আর জমির ওপর ঘর থাকলে সরকার বেশি ক্ষতিপূরণ দেবে। তাই উঠিয়েছি। তবে এলাকায় আমি একা নই, যার যার জমি পড়েছে প্রত্যেকেই পাকা ভবন নির্মাণ করছে।  

একই এলাকার দেলোয়ার হোসেনও তার ১৭ শতাংশ জমির মধ্যে ১২ শতাংশের ওপর পাকা ঘর র্নিমাণ করছেন।  

এদিকে নলছিটির ভরতকাঠি গ্রামেও চলছে একই অবস্থা। এ গ্রামের বাসিন্দা মো. মিজান বলেন, রেললাইনের জন্য সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণ করে বাড়িতে বাড়িতে একটি নম্বর দেওয়া হয়েছে। এরপরই গ্রামের বাসিন্দারা সম্ভাব্য জায়গার হিসেব ধরে ধরে স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। এর মধ্যে অনেকেই বেশ প্রভাবশালী।  

সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গা উপজেলা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ২১১ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার রেলপথের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ রেললাইনের প্রস্থে ১০০ মিটার জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। যে প্রকল্পের আওতায় ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিডিসি) হয়ে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেফ গার্ড কনসালট্যান্ট (ডিএসসি) মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সার্ভে কার্যক্রম চালানো হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করা হচ্ছে। যেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নানা সুবিধা-অসুবিধার কথা বলা হয়েছে।  

পর্যায়ক্রমে চলমান সব সার্ভে যাচাই-বাছাই করে রেলপথের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। এরপরই শুরু হবে রেলপথ অবকাঠামো নির্মাণের কার্যক্রম।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিএসসির সুপারভাইজার মো. সরোয়ার জাহান পার্থ বাংলানিউজকে বলেন, মাঠ পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন কথা শুনছি এবং ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের পদক্ষেপগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরার কাজ করছি।

এদিকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেললাইনের জায়গা নির্ধারণ এখনই চূড়ান্ত করা হয়নি, তাই যারা খালি জমিতে স্থাপনা তৈরি বা পরিবর্তন করছেন তারা বেশি লাভের আশায় লোকসানের সম্মুখীন হতে পারেন। আবার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও তাদের জরিপের সময় স্থানের বিবরণ টুকে নিচ্ছেন, এতে স্থাপনা নির্মাণ বা পরিবর্তন করলে কতটা লাভবান হওয়া যাবে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যারা অতিলোভে এখন স্থাপনা তৈরি করছেন, কিংবা এসব স্থাপনা তারা নিজেরাও কখনও ব্যবহার করবেন না তারা অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কারণ সব জায়গা কিন্তু অধিগ্রহণ হবে না এবং কোন জায়গাটি অধিগ্রহণ হবে তাও এখনও সুনির্দিষ্টভাবে অনুমোদিত নয়। অর্থাৎ এখনও প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯
এমএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad