ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাসি হত্যার পলাতক আসামি সোহেল গ্রেফতার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
হাসি হত্যার পলাতক আসামি সোহেল গ্রেফতার

ঢাকা: সাভারের আমিনবাজারের শিবপুরে চাঞ্চল্যকর হাসি আক্তার হত্যা মামলার পলাতক আসামি সোহেল রানাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। 

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কুমিল্লা শহরের ধর্মসাগর পার্কের সামনে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র‌্যাবের কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিইও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, সাভার থানার চাঞ্চল্যকর হাসি আক্তার হত্যা মামলার ছায়াতদন্ত করে জানা যায় যে, হাসির সঙ্গে ঘটনার চার মাস আগে মো. সোহেল রানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর দাম্পত্য জীবন শুরু করার আগেই হাসির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সোহেলসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। একপর্যায় ভিকটিম নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য ঘটনার দুই মাস আগে উভয়পক্ষের অভিভাবকের উপস্থিতিতে আসামি সোহেলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়।  বক্তব্য রাখছেন র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিইও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।  ছবি: বাংলানিউজমোজাম্মেল হক বলেন, স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর ভিকটিম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদে সে একটি এনজিওতে চাকরি নিয়ে সাভার থানার আমীন বাজার শিবপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকে।

এসময় আসামি সোহেল হাসিকে তার অফিসে আসা-যাওয়ার পথে এবং ভাড়া বাসায় গিয়ে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করাসহ টাকা দাবি করে। পথে-ঘাটে উত্ত্যক্ত না করাসহ সোহেলকে তার বাসায় যেতে নিষেধ করে হাসি। কিন্তু সোহেল তার কথায় ক্ষুদ্ধ হয়ে আরও বেশি করে উত্ত্যক্ত করতে থাকে এবং তার কাছে টাকা দাবি করে। হাসি সোহেলকে কোনো টাকা দেবে না বলে স্পষ্ট জানালে সোহেল আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়।  

তিনি বলেন, একপর্যায়ে গত ১ মে অফিস বন্ধ থাকায় হাসি তার ভাড়া বাসায় থাকে। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সোহেল তার ভাড়া বাসায় জোর করে ঢুকে এবং তার কাছে টাকা দাবি করে। হাসি সোহেলকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে এলোপাতাড়িভাবে চড়, থাপ্পর, কিল, ঘুষি মারতে থাকে। চোখ ও মাথার একপাশে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায় হাসি।  

এসময় সোহেল হাসির চুল ধরে ফ্লোরের টাইলসের সঙ্গে উপর্যুপরি মাথায় আঘাত করতে থাকে এবং সবশেষে খাটের নিচে থাকা ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে। হাসির মৃত্যু হয়েছে ভেবে সোহেল আলমারির ড্রয়ার থেকে তিন ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৩০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট দেড় লাখ টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।

মোজাম্মেল হক বলেন, পরে বাড়ির মালিক ভিকটিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতারে ভর্তি করেন। একপর্যায়ে ভিকটিম নিউরোলজি সায়েন্সের আইসিওতে লাইফ সাপোর্টে ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর ৭ মে বিকেল ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় হাসির মা বাদী হয়ে সাভার থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পরে আসামি ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদীকে হত্যার হুমকি দিতে থাকে। মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-৪ মামলাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পারিপার্শ্বিক অবস্থাসহ সার্বিক বিবেচনায় র‌্যাব-৪ এর একটি দল মামলার প্রধান পলাতক আসামি সোহেলকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার সোহেলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাভার থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এ র‌্যাব কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
এমএমআই/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।