ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেপরোয়া মেঘনা গ্রুপ: দেড় হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি ধামাচাপা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
বেপরোয়া মেঘনা গ্রুপ: দেড় হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি ধামাচাপা

ঢাকা: কর ফাঁকিতে একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মেঘনা গ্রুপ। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান তানভীর ফুডস লিমিটেড গুঁড়ো দুধ আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অর্থ পাচারে জড়িত। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে মেঘনা গ্রুপ সরকারকে দেড় হাজার কোটি টাকা শুল্ককর বঞ্চিত করেছে। দেশের শীর্ষ কর ফাঁকিবাজ মেঘনা গ্রুপের অনিয়ম দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত ধামাচাপা পড়ে আছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী বলেন, ‘২০১৪ সালের অক্টোবরে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় তানভীর ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দেড় হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা অনুসন্ধানে নেমেছিল দুদক। ’

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এফ মোস্তফা কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই দিন বিকেল ৩টা ২০ মিনিট থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে কর ফাঁকিবাজি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী।

দুদক সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তফা কামাল ২০১০ ও ২০১১ সাল পর্যন্ত আমদানি করা গুঁড়ো দুধের এলসি, ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিংয়ের রেকর্ডপত্রের কপি জমা দেন। অনুসন্ধানের প্রয়োজনে আরও রেকর্ডপত্র সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে দুদককে তা সরবরাহ করেননি মোস্তফা কামাল।  

জানা যায়, মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান তানভীর ফুডস লিমিটেড গুঁড়ো দুধ আমদানির আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে মর্মে তথ্য পেয়েছে দুদক। দুদক জানতে পেরেছে, দেশের ৭০ ভাগ গুঁড়ো দুধ আমদানি হয় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস থেকে। তানভীর ফুড লিমিটেড প্রতি টন গুঁড়ো দুধের বিপরীতে রপ্তানিকারক দেশগুলোয় হুন্ডির মাধ্যমে এক থেকে দেড় হাজার মার্কিন ডলার প্রেরণ করেছে। গুঁড়ো দুধ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের পাশাপাশি মূল্য পরিশোধ দেখিয়ে এই অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার করে। আমদানিকারক অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে কম মূল্য দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। এভাবে ২০১১ সালের ১১ জুলাই ভ্যালুয়েশন প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে এক টন গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে একটি সুপরিচিত দুধের ব্র্যান্ড ব্যয় করেছে ৪ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার। অথচ একই সময় তানভীর ফুড লিমিটেড ফ্রেশ গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে ব্যয় করে মাত্র ২ হাজার ৭০০ ডলার। অস্ট্রেলিয়ার ইকোভাল ডেইরি ট্রেডের তথ্যানুসারে ২০১১ সালের ২১ জুলাই বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতি টন গুঁড়ো দুধের মূল্য উল্লেখ করেছে ৩ হাজার ৭৯০ ডলার। অথচ একই সময় তানভীর ফুড লিমিটেডকে সরবরাহ করা প্রতি টন গুঁড়ো দুধের মূল্য নিয়েছে ২ হাজার ৪৮০ ডলার। অর্থাৎ প্রতি টনে আন্ডার ইনভয়েসিং হয়েছে ১ হাজার ৩১০ ডলার। প্রতি ৫০ টনে ৬৫ হাজার ৫০০ ডলার পাচার করেছে। কম দামে গুঁড়ো দুধ এনে উচ্চমূল্যে এ দেশে বিক্রি করছে তানভীর ফুড লিমিটেড।  

জানা গেছে, ২০০৯ ও ২০১০ সালে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার শুল্ককর থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। ওই দুই বছর বিশ্ববাজারে প্রতি টন গুঁড়ো দুধের মূল্য ছিল ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার।  

এ তথ্য আমলে নিয়ে দুদক বিষয়টির ওপর অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় তলব করা হয় মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।