ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সবাই থাকতেও ‘সম্বল’ শুধু লাঠি

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
সবাই থাকতেও ‘সম্বল’ শুধু লাঠি একা একাই দিন কাটে বৃদ্ধা সাবিনার। ছবি: বাংলানিউজ

গাজীপুর: ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজন সবাই আছে। শুধু আদর-যত্ন ও দেখাশোনা করার কেউ নেই। অযত্ন-অবহেলায় কলাবাগানে গোবরের স্তূপের পাশে ছোট্ট একটি ডেরায় ঠাঁই হয়েছে তার। বলছিলাম, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ৯০ বছরের বৃদ্ধা সাবিনা খাতুনের কথা। 

বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে পড়েছেন এ বৃদ্ধা। বাঁশের লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করতে হয়।

লাঠি ছাড়া যেন আর কেউই নেই এ বৃদ্ধার! এটাই তার একমাত্র সম্বল। অথচ দুই ছেলে, তিন মেয়ের মা সাবিনা খাতুন। ছেলে-মেয়েদের কাছে হয়ে উঠেছেন সংসারের বোঝা। তাই আশ্রয় মেলেনি কারও ঘরে। বাড়ির বাইরে নির্জন কলাবাগানে গোবরের স্তূপের পাশে ছোট একটা টিনের ঘরে একা দিন কাটান এ বৃদ্ধা।  

বাগানের ভেতর ছোট্ট ঘরে ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধার।  ছবি: বাংলানিউজ

সাবিনা খাতুনের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে তার স্বামী নিয়ত আলী মারা যান। জায়গা-জমি যা ছিল, জীবিত অবস্থায় নিয়ত আলী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের নামে সব লিখে দিয়ে যান। স্ত্রী সাবিনা খাতুনকেও দেন কিছু অর্থসম্পদ। তবে, ছোট ছেলে আহাম্মদ আলী (৬০) মায়ের সেই সম্পদ নিয়ে নেন বলে জানিয়েছেন বড় ছেলে নূর মোহাম্মদ (৬৫)। ছেলে-মেয়েরা আলাদা আলাদা সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ছোট ছেলে আহাম্মদের বাড়ি থেকে দিনে একবার খাবার পাঠানো হয় বৃদ্ধার ঘরে। এটুকু খেয়েই কোনো রকমে বেঁচে আছেন ৯০ বছরের এ বৃদ্ধা।  

সাবিনা খাতুনের বড় ছেলে নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, মা একসময় অনেক অত্যাচার করেছেন। তার যে সম্পদ ছিল, তা দিয়ে দিয়েছেন ছোট ছেলে আহাম্মদকে। এ কারণে আমি আর মায়ের দেখভাল করি না।  

সাবিনার ছেলেদের রয়েছে বড় বড় বাড়ি।  ছবি: বাংলানিউজ

ছোট ছেলে আহাম্মদের স্ত্রী জরিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, তার (সাবিনা খাতুন) মাথায় সমস্যা আছে। রাতে চিৎকার-চেঁচামেচি করে সবাইকে বিরক্ত করেন। কাউকে ঘুমাতে দেন না। এ জন্যই বাড়ির বাইরে টিনের ঘর করে সেখানে রাখা হয়েছে। সেখানেই তার খাবার পাঠানো হয়।

বড় মেয়ে মোমেনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, দুই ভাইয়ের বড় বড় ঘর খালি পড়ে আছে। কিন্তু, মাকে একটা ঘর দেয় না। তারা মাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। বাড়ির বাইরে একটা টিনের ডেরায় থাকতে দিচ্ছে।  

তিনি বলেন, আমার থাকার ঘর একটাই। সেখানে স্বামী-স্ত্রী দু’জন থাকি। অভাবের সংসার কোনো রকমে চলে। মাঝে-মধ্যে মাকে বাড়িতে এনে গোসল করিয়ে দেই, খাবার দেই, একটু-আধটু যত্ন করি।

ছোট্ট ঘরে একা দিন কাটে বৃদ্ধার।  ছবি: বাংলানিউজ

বৃদ্ধা সাবিনা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি সবাই আছে। কি জানি, ছেলেরা আমারে আলাদা রাখছে কেন? ছেলে-মেয়েদের বাড়িতে জায়গা হয় না আমার। আউশ (শখ) কইরা ছেলের নাম রাখছিলাম নূর মোহাম্মদ। সেই ছেলেও কোনো খোঁজ-খবর নেয় না।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
আরএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ