ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুন্সিগঞ্জে ‘জনস্বার্থে’ রাতের বেলা নিরাপত্তার কড়াকড়ি

সাজ্জাদ হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
মুন্সিগঞ্জে ‘জনস্বার্থে’ রাতের বেলা নিরাপত্তার কড়াকড়ি রাত ১১টা বাজতেই ফাঁকা রাস্তাঘাট। ছবি: বাংলানিউজ

মুন্সিগঞ্জ: রাত ১১টা বাজলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনায় মুন্সিগঞ্জ শহরের সব যানবাহনকে ফিরতে হয় গ্যারেজে। পুলিশ নেমে পড়ে দোকানপাট বন্ধ করতে। সাড়ে ১১টার দিকে যদি কোনো দোকানদার দোকান খোলা রাখে, তাহলে পুলিশ এসে শাসিয়ে যায়। এতে স্থানীয় দোকানদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। জনগণের ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কড়াকড়ি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন শহরসহ সদর উপজেলার বাসিন্দারা। যদিও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, রাত ১২টার পর দোকান খোলা থাকলে বহিরাগত লোকজন আড্ডা দিয়ে থাকে এবং তারা অপরাধে জড়ায়। শহর এলাকার নিরাপত্তার জন্যই এই ব্যবস্থা।

সদর এলাকার বাসিন্দারা জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় রাত ১১টায় শহর প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়, যেন রাত্রিকালীন কারফিউ জারি রয়েছে। কদাচিৎ কয়েকটি ইজিবাইক ও মিশুক (স্থানীয় পরিবহন) দেখা গেলেও তাদের নিরাপত্তার নামে পুলিশি জেরার মুখোমুখি হতে হয়।

ওই সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ কিংবা দূরের কোনো যাত্রী বাসে বা লঞ্চে শহরে এলে যানবাহন সংকটে পড়েন। গত কয়েকদিন মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাট ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে বহু যাত্রীকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতেও দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষ করে ইজিবাইক ও মিশুকের অভাবে রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতেও সমস্যা পোহাতে হয় লোকজনকে।

ঢাকার পাশ্ববর্তী একটি জেলা শহরে আইন-শৃঙ্খলার এমন কড়াকড়িতে অনেকে উষ্মা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় যদি দীর্ঘ রাত পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকতে পারে, যানবাহন চলাচল করতে পারে এবং তাতে যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, তাহলে মুন্সিগঞ্জ শহরে দোকানপাট খোলা থাকলে বা যানবাহন চলাচল করলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কিছু নেই। শিগগির এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা দরকার।  

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসির বাংলানিউজকে বলেন, রাত ১১-১২টার পর কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়ি পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। রাতে গাড়ি চলাচলের একটি ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ করা হলে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জোরপূর্বক পথচারীদের বাসায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছে না, জনগণের স্বার্থে পুলিশ এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বয়স্ক মানুষ ছাড়া যারা ১২টার পর ঘোরাফেরা করে ও সন্দেহ হয়, তাদের বাসায় যেতে বলা হয়। নইলে শহরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। সন্ধ্যায় শহর এলাকা থেকে মিশুক-ইজিবাইক ভাড়া করে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর মারধর করে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে।  

যারা বয়স্ক ও রোগী তাদের গাড়ি আটকানো হয় না জানিয়ে ওসি বলেন, রাত ১২টার পর দোকান খোলা থাকার দরকার নেই। রাত ১২টায় দোকান খোলা থাকলে বহিরাগত লোকজন আড্ডা দিয়ে থাকে। তখন তারা কোনো অপরাধ করে চলে যায়। শহর এলাকায় যারা থাকেন তাদের নিরাপত্তার জন্যই এই ব্যবস্থা। যারা বেশি সময় নিয়ে বাসায় ফেরেন কিংবা এর জন্য ভুক্তভোগী কিন্তু ৫ শতাংশ।  

তিনি আরও বলেন, আমি দুই মাস হবে সদর থানায় ওসি হিসেবে এসেছি। এই থানায় দায়িত্ব নেওয়ার আগে দিনে-দুপুরে ছিনতাই-চুরি হতো। বেশিরভাগ ইজিবাইক ও মিশুক নিয়ে যেতো। রাতের বেলা এসব ঘটনা ঘটতো। আমি আসার পরে পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে ইজিবাইক ও গ্যারেজ মালিকদের সঙ্গে মিটিং করেছি। দেখা যায়, শহর থেকে ইজিবাইক ও মিশুক ভাড়া নিয়ে বজ্রযোগীনি যায়, তখন চালককে ফেলে রেখে ছিনতাই করে। রাত ১-২টার দিকে ঢাকা থেকে এসে যারা পরিবহন সংকটে পড়েন, এদের সংখ্যা কম। যখন মাইক্রোবাস ও লেগুনা নিয়ে এসে ডাকাতি করে চলে যাবে, তখন বলবে পুলিশ পাহারা দেয়নি। আমরা কি পাহারা দিয়ে পুরো শহরের নিরাপত্তা দিতে পারবো? এটা তো সম্ভব না।  

এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, ওপেন করে দেবো? ওপেন করে দিলে পরে কোনো ঘটনা ঘটলে আমাদের বলতে পারবে না সদর থানা ব্যর্থ। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। আগে টুকটাক চুরি হয়েছে অনেক। আমি আসার আগে গ্যারেজ মালিকদের সঙ্গে মিটিং করেছিলেন আগের ওসি। আমি এসেও মিটিং করেছি। তারাও বলেছে তাদের খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। এজন্য সময়সীমার কোনো ব্যাপার নেই, তবে এখন হার্ড লাইন থেকে সফট লাইনে যাওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, আশুরাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি ছিল। এটার জন্য হয়তো করতে পারে এমন। সদর এলাকায় রাত ১১টার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। রাতে যেসব গাড়ি চলবে তার জন্য এক ধরনের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে।  

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, রাত ১১টার পর অটোরিকশা, মিশুক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যাপারে অফিসিয়ালি কিছু জানা নেই। তবে অটোরিকশা, মিশুক এসব অবৈধ, যার কারণে দুর্ঘটনা ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। পুলিশ এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানানো যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯ 
এসএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।