ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশ নিয়োগে স্বচ্ছতার প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
পুলিশ নিয়োগে স্বচ্ছতার প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা অবলম্বন করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি অভিবাদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এবার সারাদেশের পুলিশ নিয়োগে কোনো দুর্নীতি হয়নি। একটি মানুষও পুলিশের বিরুদ্ধে চাকরির জন্য ঘুষ বা টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলতে পারেনি।

এজন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশংসা করে আগামীতেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।  

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পুলিশ একাডমিতে ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

পুলিশ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে বলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ অনেক অসহায় হয়ে পুলিশের কাছে আসেন। তাই আপনাদের সেবা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে গণমানুষের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে। জনগণের সমস্যাকে দেখতে হবে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে সেজন্য তাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করার জন্যও পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।  

বিপদে পুলিশ জনগণের বন্ধু হবে এভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। যারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়, যারা যুবসমাজকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। তাই দেশের জনগণের আস্থা অর্জনে পুলিশ বাহিনীকে আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ যাতে সর্বোচ্চ সেবা পায় সে লক্ষ্যে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ বাড়ানো হয়েছে বেতন-ভাতাও। এ সময় গত ১০ বছরে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে পুলিশে প্রায় ৪৯ হাজার ২০০ পদ সৃজন, বর্ধিত জনবলের সঙ্গে প্রয়ােজনীয় যানবাহন ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ, গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের এন্টি টেরােরিজম ইউনিট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, পুলিশ ব্যুরাে অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), টুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং দু’টি স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন গঠন উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ’ গঠনের উদ্যোগ, এসআই পদকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ইন্সপেক্টর পদকে প্রথম শ্রেণি পদে উন্নীত করা, জাতির জনক প্রদত্ত আইজিপির র‌্যাংক ব্যাজ পুনঃপ্রবর্তন করে আইজিপির পদকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করা, সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন, আরও চারটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু, ঝুঁকি ভাতা প্রবর্তন, ‘৯৯৯’, বিডি পুলিশ হেল্পলাইন এবং অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস চালু, পুলিশের বিভিন্ন স্তরে নারীদের নিয়ােগ, পুলিশের আবাসন, রেশন, চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো, উন্নত প্রশিক্ষণ, লজিস্টিক, যানবাহন, প্রয়ােজনীয় অবকাঠামাে নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণের আগে প্যারেড কমান্ডার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শাহিন আক্তার ও সহকারী প্যারেড কমান্ডার রবিউল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এক এক করে মোট ৮টি কন্টিনজেন্ট প্যারেড অংশগ্রহণ করে। ৮টি কন্টিনজেন্ট থাকা মোট ১১৭জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান। এরপর পতাকাবাহী দল, পুলিশ একাডেমির বিশেষ অশ্বারোহী দল ও সর্বশেষ বাদক দল একে একে মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম ও অভিবাদন জানান।

পরে একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে ট্রফি বিতরণ করেন। পরে তিনি নবীন এই পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। পরে সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আইজিপিকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারগণ হলেন- ‘বেস্ট শ্যুটার’ খায়রুল কবির, 'বেস্ট ফিল্ড পারফমার’ আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, ‘বেস্ট হর্সম্যানশিপ’ সালাহউদ্দিন, ‘বেস্ট একাডেমিক' সাইফুল ইসলাম খান এবং বেস্ট প্রবেশনার সালাহ্ উদ্দিন। প্যারেডে ১৭ জন নারী অফিসারসহ ১১৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর সারদায় পৌঁছান। সকাল সাড়ে ১০টায় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে সারদায় থাকা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। পরে বেলা ১১টায়  মঞ্চে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী এবং ৩৬তম বিসিএস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপণী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী একাডেমি চত্বরে একটি আম গাছের চারা রােপণ করেন। তিনি শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারগণের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল অতিরিক্ত আইজিপি মো. নজিবুর রহমান, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, ডা. মনসুর রহমান, আয়েন উদ্দিনসহ সরকারের সিনিয়র সচিব, বিদেশি কূটনীতিক, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও মুক্তিযােদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
এসএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।