ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এক ব্রিজে আটকা হাজার মানুষের স্বপ্ন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
এক ব্রিজে আটকা হাজার মানুষের স্বপ্ন এক ব্রিজে আটকা হাজার মানুষের স্বপ্ন। ছবি: বাংলানিউজ

সাভার (ঢাকা): দুই দশক ধরে বলাবলি হচ্ছে ব্রিজ হবে, ব্রিজ হবে। কত সাংবাদিক, চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য এলেন। তারা আসেন, দেখেন, চলে যান৷ কিছুদিন পর ক্ষমতা বদল হয়। ক্ষমতা পাওয়ার পর প্রতিশ্রুতি দেয় অনেকেই। কিন্তু ব্রিজ আর হয় না। অথচ ব্রিজটি আমাদের খুবই দরকার।

আক্ষেপ করে কথাগুলো বললেন আক্তার হোসেন নামে ওই এলাকার এক ব্যবসায়ী।

সাভারের আশুলিয়ায় তুরাগ নদের পাশে রুস্তমপুর এলাকার বাসিন্দা আক্তার হোসেন৷ এগুলো রুস্তমপুরসহ আশপাশের দশ গ্রামের মানুষের মনের কথা।

এই একটি ব্রিজের জন্য আটকে আছে তাদের গ্রামের হাজারো মানুষের স্বপ্ন।

শহরের খুব কাছে হলেও এই একটি ব্রিজের কারণে পিছিয়ে আছে গ্রামটি। কাজের প্রয়োজনে তুরাগ নদের ওপারে উত্তরায় যাতায়াত বেশি রুস্তমপুর গ্রামের মানুষের। কিন্তু বিকল্প পথ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পথেই যাতায়াত করেন তারা। এতে প্রায়ই ঘটে নৌকা ডুবির মত নানা দুর্ঘটনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে একটি ব্রিজ এখন আশপাশের মানুষের দাবি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নদী পার হয়ে ওপারে যাওয়ার জন্য ঘাটে আছে মাত্র একটি ছোটো নৌকা। সকালে নৌকায় করে পারাপার হতে গেলে সিরিয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়৷ সেই ছোট্ট নৌকা দিয়েই প্রতিনিয়ত হাজারো গ্রামবাসী, শিক্ষার্থী, পোশাককর্মী, ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করেন। নদের দুই ঘাটেই নৌকায় উঠতেও প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছেন নারীসহ শিশু ও বৃদ্ধরা৷ নৌকা এক পাড় ছেড়ে অন্য পাড়ে গেলে তা ফিরে আসার অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় অন্য যাত্রীদের।  
এক ব্রিজে আটকা হাজার মানুষের স্বপ্ন।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয়রা আক্ষেপ করে জানায়, দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে ঠিকই তবে তাদের গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্যও খেয়া নৌকার ওপর ভরসা করতে হয়। বারবার ক্ষমতার পরির্বতন হয় কিন্তু তাদের এলাকার প্রয়োজনীয় এই ব্রিজটা তৈরি হয় না।  

উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রেহেনা সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাসে যান। তিনি প্রায় প্রতিদিনই এই খেয়া নৌকা দিয়েই পারাপার হন। তিনি আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে বলেন, আপনারা তো আসেন দেখেন ছবি তোলেন আর চলে যান। আপনাদের মত অনেকেই এখানে আসেন কিন্তু আমাদের ব্রিজ তো হয় না। ব্রিজটি হলে আমাদের যে কি উপকার হবে বলে বোঝাতে পারবো না। আবহাওয়া একটু খারাপ হলেই নৌকা চলে না। আর সেদিন কলেজে যাওয়াও হয় না।  

ব্যবসায়ী জসিম বলেন, হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই খেয়া নৌকা দিয়ে পার হয়। অনেক সময় অনেক দুর্ঘটনার শিকার হই আমরা৷ নৌকায় করে পার হতে হয় বলে এই ১০ এলাকার মানুষ বেশিরভাগ দিনই সঠিক সময়ে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে না। তাছাড়া নদীর পানি যখন কমে যায় তখন পোশাক কারখানার বর্জ নদীতে পড়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। তখন নৌকা করে পারপার হওয়াও কষ্টকর হয়ে যায়।  

জাহান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, শুধু এই ব্রিজটির জন্য আমাদের এলাকাটি অনেক পিছিয়ে রয়েছে। রুস্তমপুর একটি কৃষিপূর্ণ গ্রাম, এখানের উৎপাদিত কৃষিপণ্যও ব্রিজের অভাবে বাজারতাজ করতে পারে না কৃষকরা।  

ব্রিজটি হওয়ার আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আশুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহব উদ্দিন মাদবর বাংলানিউজকে বলেন, ব্রিজটির মাপ-যোগসহ প্রাথমিক কাজ করা হয়েছে। এখন সয়েল টেস্ট হবে। আমরা আশা করছি শিগগিরই ব্রিজটির কাজ শুরু হবে।  

এ বিষয়ে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালহে হাসান প্রামাণিক বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু সেখানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক আছে সেহেতু তাদের কাছ থেকে এনওসি নিয়ে এটার ডিজাইন এনে সেই ডিজাইন নিয়ে তারপর ট্যান্ডারে যাবে। এটি যত্র দ্রুত সম্ভব টেন্ডারে যাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।