ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সফেদ কাপড়ে মোড়ানো ফরিদের স্বপ্ন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
সফেদ কাপড়ে মোড়ানো ফরিদের স্বপ্ন ফরিদ উদ্দিন, ছবি: সংগৃহীত

সিলেট: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন। এমসি কলেজ থেকে রসায়নে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরি নেন ব্যাংকে। ২০১৮ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে পাড়ি জমান রাশিয়ায়।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কারিকোনা গ্রামের শমসাদ আলীর ৭ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনিই সবার বড়। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হিসেবে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার।

সেই স্বপ্নের পরিসরকে বড় করতে রাশিয়ায় থেকে যান। কিন্তু সেখান থেকে স্বপ্নপূরী ফ্রান্স পৌঁছার আগেই সফেদ বা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লো ফরিদের স্বপ্ন।
 
দালাল মারফতে স্লোভাকিয়ার পাহাড়ি পথে রওনা হওয়ার পর জঙ্গলে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফরিদ। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের ১৬ দিনপর শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) স্লোভাকিয়ার জঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ।

নিহত ফরিদের চাচা আলকাছ আলী আওলাদ ও তার চাচাতো বোন যুক্তরাজ্য থেকে স্লোভাকিয়া পৌঁছে তার মরদেহ শনাক্ত করেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ফরিদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

নিহতের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স পৌঁছে দিতে দালালের সঙ্গে ৭ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন ফরিদ। চুক্তির টাকা দেশে মধ্যস্থ দালালের এজেন্টের কাছে জমা রাখেন তারা। ইউক্রেনে দালালের শিবিরে মাসখানেক রাখা হয় তাকে। সাতজনের দল ৫দিন হেঁটে স্লোভাকিয়া জঙ্গলে পৌঁছায়। সেখানে খাবার না পেয়ে ফরিদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দালালরা তাকে সেখানে রেখে অন্যদের ফ্রান্স পৌঁছায়।

তিনি বলেন, গত ২৭ আগস্ট পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন আমার ভাই। পরদিন (২৮ আগস্ট) তাদের দল ফ্রান্সের উদ্দেশে যাত্রা করবেন বলে তিনি জানিয়েছে ছিলেন। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
 
নিহতের সঙ্গীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, স্লোভাকিয়া জঙ্গলে অসুস্থ থাকা তার ভাইয়ের থেকে সঙ্গীয়দের আলাদা করে আড়ালে নিয়ে যায় দালালরা। কিছুক্ষণ পর বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। এরপর আর ফরিদের কোনো খোঁজ পাননি তারা। সঙ্গীয়দের ধারণা অসুস্থ ফরিদকে ফেলে যেতে পারছিল না তাই দালালরা গুলি করে মেরে ফেলেছে।

গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, তার ভাইয়ের মরদেহ দেশের আনার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। তাতে প্রায় সপ্তাহ দিন লেগে যেতে পারে।
 
নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, প্রায় ৫ বছর আগে বিয়ে করেন ফরিদ। তার ইরা তাছিয়া নামে ৩ বছরের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত ফরিদের ঘনিষ্ট বন্ধু সিদ্দিকুর রহমান সুমন বলেন, ফরিদ খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। তার এ অকাল মৃত্যু কেবল পরিবারে নয়, বন্ধুমহলেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রিয় বন্ধুর জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, এভাবে আর কোনো মায়ের বুক যেনো খালি না হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯
এনইউ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।