ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাজারে ২ নারী হত্যার রহস্য মেলেনি আজও 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯
মাজারে ২ নারী হত্যার রহস্য মেলেনি আজও 

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার কাটাখালির ভিটিশিল মন্দির এলাকার বারেক ল্যাংটার মাজারে আমেনা বেগম (৬০) ও তাইজুন খাতুন (৪৮) নামে দুই নারীকে হত্যার দুই বছর পূর্ণ হলো। তবে এখনো এ ঘটনার মূল রহস্য জানা যায়নি।

জেলা পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের কোনো সূত্র বের করতে না পারায় মামলাটি ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ সিআইডি’র কাছে হস্তান্তর করে। সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যেই এ ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।


 
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে কোনো এক সময় মাজারের ভেতর গলা কেটে হত্যা করা হয় ওই দুই নারীকে। জেলা পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের কোনো সূত্র বের করতে না পারায় মামলাটি সিআইডি’র কাছে হস্তান্তর করে। হত্যাকাণ্ডের দুই দিনপর তাইজুন খাতুনের ছেলে কফিলউদ্দিন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তারা চারজনই হাইকোর্টে জামিনে মুক্তি পান। এরমধ্যে চলতি বছরের জুন মাসে একজন আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে সিআইডি গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানতে পারে। নেই তথ্যানুযায়ী তদন্ত এগিয়ে চলছে।  

সিআইডি’র (ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরের মে মাসে তদন্তের চার্জ গ্রহণ করেছি। মামলার তদন্ত বর্তমানে ভালোর দিকে যাচ্ছে। এ মামলার চার আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। নতুন একটি সূত্র পেয়ে অগ্রগতির দিকে আছে। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।

সিআইডি’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কয়েকজন পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে একজন আসামিকে রিমান্ডে এনে তথ্য পাওয়া গেছে। যাকে রিমান্ডে আনা হয়েছে তার সঙ্গে ডিএনএ টেস্ট মিলেছে। আগের তদন্তে ত্রুটি ছিল।

তিনি আরও জানান, দুই নারীকে মেরে ফেলার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। হয়ত গোপনীয় কিছু দেখে ফেলার পর তাদের হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলে যে কনডম পাওয়া যায় তার সঙ্গে একজন আসামির ডিএনএ টেস্টে আলামত মিলেছে। ধারণা করা যাচ্ছে, সেখানে তৃতীয় একজন নারীও ছিলেন।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় এলাকায় মাদকের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও হত্যার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। এ কারণে মামলাটির অগ্রগতি নেই।

জানা যায়, এ মামলায় মাসুদ কোতোয়াল (৫৫), তার ছেলে আরিফ (২৬), বৈখর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী শান্তির ছেলে বাবু সরকার (২৩), রাজনকে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তারা হাইকোর্টের মাধ্যমে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়। আদালতের অনুমতি স্বাপেক্ষে তাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।  
 
পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমেনা বেগমের স্বামী খালেক মিজী মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি মাজারে আসেন। তিনি গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া গ্রামে থাকতেন। অপরদিকে, তাইজুন বেগম সদর উপজেলার বকচর গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি দুই ছেলের সঙ্গে ঢাকার শ্যামপুর এলাকায় থাকতেন এবং প্রায়ই মাজারে আসতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাজারের খাদেম মাসুদ অনেক বছর আগে ভিটিশিলমন্দির তার নিজ বাড়িতে প্রথমে এই মাজার স্থাপন করেন। কিন্তু স্থানীয়দের বিরোধিতায় ১৫/১৬ বছর আগে তিনি মাজার সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। পরে পৈত্রিক বাড়ি থেকে কিছু দূরে কাটাখালির কাছাকাছি নিজের কেনা সম্পত্তিতে মাসুদ মাজার স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এখানে নিয়মিত ওরশ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। খাদেম নিজে কোনো মাদক গ্রহণ না করলেও প্রতি সপ্তাহে এখানে ওরশ বসত। তখন ভক্তরা মাদক সেবন করতো। এছাড়া গান-বাজনা হতো। মাজারকে কেন্দ্র করে মাদক সেবীদের আনাগোনাও ছিল। মাজারের জায়গা নিয়েও বিরোধ ছিল। এসব কারণ ছাড়াও আরও কারণ থাকতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।