ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কেবল কেঁদেই চলেছেন দুই সন্তানের জননী শেফালি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
কেবল কেঁদেই চলেছেন দুই সন্তানের জননী শেফালি

গাজীপুর, পাঁচহাট (নেত্রকোনা) থেকে: দুই সন্তানের জননী শেফালি আক্তার। ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে এখন পড়ে আছেন ঘরের বিছানায়। অপারেশনের নামে তার কেটে নেওয়া স্তনে পচন ধরে দুর্গন্ধ বেরোনোর পাশাপাশি ঝরছে রক্ত-পুঁজ! অসহ্য কষ্ট যন্ত্রণায় অসহায় এই নারী নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু ফেলছেন চোখের পানি।

নেত্রকোনার খালিয়াজুরী প্রত্যন্ত অঞ্চল পাঁচহাট গ্রামে ছোট্ট একটি ঘরে পড়ে আছেন শেফালি। সেই ঘরে গিয়ে দেখা যায়, যন্ত্রণায় কাতর মায়ের মাথায় হাত বোলাচ্ছে অবুঝ ছোট্ট দুই শিশু রয়েল (৯) ও প্রান্তি (৬)।

শিশুদের চোখে-মুখে এখন শুধুই মাকে হারানোর ভয়। কারণ, তাদের বৃদ্ধা নানী রেজিয়া ও প্রতিবেশিরা সারাক্ষণই বলে যাচ্ছেন, ‘তোদের মা আর বাঁচবে না’। চিরতরে মাকে হারানোর সেই ভয় পেয়ে বসেছে এখন এই শিশুদের।

ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চলছিল শেফালির সংসারের। বৃদ্ধা রেজিয়ার ভিক্ষার টাকায় পরিবারটি কোনোরকম টিকে থাকছিল। এরমধ্যে তাদের ওপর এই মহাবিপদ।

বৃদ্ধা জিয়া তার মেয়ে শেফালির বর্তমান পরিস্থিতি ও স্তন কাটা সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানান, স্তনের মধ্যে ছোট্ট গুটির মতো মনে হতো শেফালির। পরে পাঁচহাট বাজারে ইকবালের ফার্মেসিতে চেম্বার বানিয়ে বসা চিকিৎসক মানিক তালুকদারের সঙ্গে কথা বলেন তারা।  

তখন মানিক তালুকদার জানান, শেফালির স্তন ক্যান্সার হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপারেশন করতে হবে এবং সেই জন্য প্রয়োজন ২০ হাজার টাকা।  

ভিক্ষা আর ধার-দেনা করে টাকা যোগাড় করে শেফালিকে প্রাণে বাঁচাতে ইকবালের ফার্মেসিতে পাঠান রেজিয়া। সেখানেই গত ৭ এপ্রিল অপারেশনের নামে ইচ্ছেমতো ব্লেড দিয়ে শেফালির স্তন কেটে দেন কথিত চিকিৎসক মানিক তালুকদার।

এরপর থেকেই কাটা স্তনে পচন ধরে যায় শেফালির। অনবরত পড়তে থাকে রক্ত-পুঁজ। অসহ্য যন্ত্রণা বাড়তে থাকে তার।  

চোখের পানি মুছতে মুছতেই শেফালি বলেন, আগে বাবা হারিয়েছে আমার সন্তানেরা, এখন হারাতে বসেছে মাকে। সেই চিন্তায় মরেও শান্তি পাবো না।

খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সিয়াম বাংলানিউজকে জানান, শেফালিকে যত দ্রুত সম্ভব ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। তার শারীরিক পরিস্থিতি ভালো না। কাটা স্তনে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে রক্ত-পুঁজ গড়াচ্ছে। তার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম মাহমুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, স্তন কেটে নেওয়ার ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী শেফালি। আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

বর্তমান করুণ দশায় চিকিৎসা চালানোর মতো আর্থিক অবস্থা নেই শেফালির। সেক্ষেত্রে তাকে কিছু অর্থ সহায়তা দিয়ে মমেক হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে ওসি বলেন, ভুয়া চিকিৎসকের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ধিক্কার জানাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে রীতিমতো হতবাক।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
এসআরএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।