ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুন্সিগঞ্জে অবৈধ বাহন গিলছে ১৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ

সাজ্জাদ হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
মুন্সিগঞ্জে অবৈধ বাহন গিলছে ১৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জে বিদ্যুতের ১০ শতাংশ খরচ হয় ব্যাটারিচালিত অনুমোদনহীন অবৈধ ইজিবাইক ও মিশুকসহ বিভিন্ন যানবাহনের পেছনে। অর্থমূল্যে হিসাব করলে বছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে ওইসব অবৈধ বাহনের পেছনে।

মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, শহরজুড়ে প্রায় ছয় শতাধিক গ্যারেজে এসব অনুমোদনহীন যানবাহনের ব্যাটারি রিচার্জ করা হয়। আর এতে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়।

যেখানে পুরো জেলায় মাসে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ মেগাওয়াট। সেই হিসাবে শুধু অবৈধ যানে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে ১০ শতাংশ।

অবৈধ যানবাহনের গ্যারেজে ট্রান্সমিটার, আবাসিক সুবিধা ও সহজ শর্তে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় বলেও জানা যায়।

সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও জেলার শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত যান চলাচল করে বলে কয়েকটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়।

সদরের রামপাল বাজার এলাকার গ্যারেজ মালিক হাসান মিয়া বাংলানিউজকে জানান, ৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগে ৮টি ব্যাটারিচালিত গাড়ি চার্জ দেওয়া যায়। বাণিজ্যিকভাবে নেওয়া সংযোগে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে চার্জ দিতে ২০০ টাকা ও মিশুকে ১২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল আসে ৪০-৪৫ হাজার টাকার মতো।

তিন বছর আগে দেড় লাখ টাকা দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে নিজের গ্যারেজে সংযোগ নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালক আলাল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, গ্যারেজে গাড়ি রেখে চার্জ দিলে মাস শেষে ছয় হাজার টাকার মতো দিতে হয়। কিন্তু বাসায় আবাসিক সংযোগে চার্জ দিয়ে দুই হাজার ২০০ টাকা বিল আসে। এক্ষেত্রে ১-২টি গাড়ির জন্য বেশিরভাগ চালকই নিজ বাড়িতেই চার্জ দেয়।

গণকপাড়া এলাকার দুইটি গ্যারেজের মালিক টিটু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, চার বছর ধরে ৩০ কেভি (কিলো ভোল্ট) ও ৭ কেভির দুইটি বিদ্যুৎ সংযোগ আছে তার দুই গ্যারেজে। চার লাখ টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ অফিস থেকে নেওয়া ৩০ কেভির সংযোগে ৩০টি ব্যাটারিচালিত মিশুক ও ২০টি ইজিবাইক চার্জ দেওয়া হয়। যার জন্য মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল আসে ৬০-৬৫ হাজার টাকা। এছাড়া ৭ কেভির সংযোগে ১২টি মিশুক ও সাতটি ইজিবাইক চার্জ দেওয়া হয়, যাতে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় মাসে ৪০-৪৫ হাজার টাকা।

মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার এ এইচ এম মোবারক উল্ল্যা বাংলানিউজকে জানান, জেলায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা ১৫০ মেগাওয়াট। ব্যাটারিচালিত যানবাহন রিচার্জ করতে প্রতিমাসে বিদ্যুৎ ব্যয় হয় কমপক্ষে ১৫ মেগাওয়াট। জুলাই মাসের হিসাব অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ক্যাটাগরিতে যানগুলোতে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ লেগেছে। গ্যারেজগুলো থেকেই ৮৫ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল হয়। কিন্তু আবাসিকের হিসাব পাওয়া যায় না।

আবাসিকে ১-২টি ইজিবাইক চার্জে বৈধতা প্রদানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া ১৫ কেভি পর্যন্ত এসব গ্যারেজে ট্রান্সমিটারও ফ্রি করার সুবিধা দিচ্ছে। সারা জেলাজুড়েই আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগে মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো বিদ্যুৎ বিল হয়ে থাকে। বছরে যার পরিমাণ হয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা।

আবাসিকের সঙ্গেই বাহন চার্জের বিলও দিয়ে থাকে গ্রাহক। সরকার এসবে সুবিধা দিচ্ছে, কিন্তু গাড়িগুলো অবৈধ। তবে বেশিরভাগ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মিশুক আবাসিক ক্যাটাগরিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে চালাচ্ছে। গ্যারেজগুলোও বাণিজ্যিক, আবাসিক ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালভাবেই সংযোগ নিয়ে থাকে। সারা জেলাজুড়েই ৬ শতাধিক গ্যারেজ আছে, যাতে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়।

তিনি জানান, গ্যারেজসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরি মিলিয়ে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন ১৫ ইউনিট লাগে ইজিবাইকের চার্জ সম্পন্ন হতে। এর জন্য ইউনিট প্রতি ৭ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা আছে। কিছু ক্ষেত্রে চুরি করেও সংযোগ নিয়ে থাকে, তবে এর সংখ্যা খুবই কম। গ্যারেজে সংযোগ নিতে ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। গ্যারেজে প্রিপেইড মিটারে জামানতের প্রয়োজন হয় না।

‘ট্রান্সমিটার সুবিধার জন্য গ্যারেজে সংযোগ গ্রহণে খরচ কমে যাচ্ছে। পূর্বে ১০ কিলোওয়াট সংযোগে ৮ হাজার টাকা দিতে হতো। প্রিপেইড মিটারে আশেপাশে যদি সংযোগ সুবিধা থাকে তাহলে ১৫-২০ হাজার টাকা লাগে। সরকার ৮-৯ টাকা দাম দিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয় করে এখন ৭ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি করছে,’ বলেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জ বিআরটিএ’র (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ও মোটরযান পরিদর্শক মাইদুল ইসলাম বাংলনিউজকে জানান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানের লাইসেন্স নীতিমালা নেই। এসবের লাইসেন্স করার কোনো সুযোগ নেই। এগুলো অবৈধ যানবাহন হিসাবে গণ্য। এসব বাহন মহাসড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই এগুলো অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করে থাকে।

মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, সারদেশেই এসব ব্যাটারিচালিত যান চলাচল করছে। সাধারণত পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এসব নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এখন তারা এসবের লাইসেন্স দিচ্ছে না। আবার লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে এগুলো বিআরটিএ এর আওতায়-ও পড়ে না। এককভাবে এসব যান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। জনগণেরও এইসব বাহনে চলাচলে আগ্রহ বেশি। এই ব্যাপারে একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন এই বিষয়ে ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

মুন্সিগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুর রায়হান বাংলানিউজকে জানান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মিশুকের সংখ্যা ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। তবে পৌরসভার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জেলায় এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ব্যাটারিচালিত যান আছে বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
এমইউএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।