ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লাখ টাকা চাঁদায় মহাসড়কে চলে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯
 লাখ টাকা চাঁদায় মহাসড়কে চলে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার! মহাসড়কে চলছে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার/ছবি- অনিক খান

ময়মনসিংহ: চার বছর আগে দেশের ২২টি মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক) ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। কিন্তু সড়ক, মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সরকারি এ নিষেধাজ্ঞার ন্যূনতম বাস্তবায়ন নেই।

উল্টো ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে ‘জিপি’ নামক চাঁদায় নির্বিঘ্নেই চলছে এসব থ্রি-হুইলার। অবশ্য এজন্য একেকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রকে গুণতে হচ্ছে দৈনিক ৩২০ টাকার ‘জিপি’।

এ হিসেবে প্রায় চার শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রকে এই ‘জিপি’ বাবদ চাঁদা দিতে হচ্ছে প্রায় লক্ষাধিক টাকা।

শ্রমিক কল্যাণের নাম করে খোদ পরিবহন শ্রমিকরাই নিত্যদিন এসব চাঁদা আদায় করছেন। এর একটি ভাগ যাচ্ছে স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের পকেটে। মূলত পুলিশের নির্লিপ্ততা ও কার্যকর তদারকির অভাবেই সরকারের এ নির্দেশনা ‘কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। জিপির নামে চাঁদার টাকা দিতে গিয়ে ত্রাহী অবস্থা সবার।

ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের সূচনা পয়েন্ট, চরপাড়া মোড়, বাইপাস মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে মিলেছে এমন তথ্য।

জানা যায়, নগরীর চরপাড়া মোড়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্র স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। মূলত এ স্ট্যান্ড থেকেই ত্রিশালের চুরখাই, বৈলর, মুক্তাগাছা, নেত্রকোনার কেন্দুয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় যানগুলো দাবড়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে চরপাড়া মোড় থেকে ত্রিশাল উপজেলা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় এসব অটোরিকশার দৌরাত্ম্য বেশি। ইদানিং এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মোটর লাগানো রিকশাও। মহাসড়কে চলছে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার/ছবি- অনিক খাননগরীর চরপাড়া মোড় থেকে ছেড়ে যাওয়া এসব অটোরিকশা প্রথমে গিয়ে থামছে ঢাকা বাইপাস মোড়ে। এখানে যাত্রী উঠানামায় সকাল বা রাত সমসময় সরগরম থাকে এ মোড়। এই বাইপাস থেকে ত্রিশাল উপজেলা পর্যন্ত একজন যাত্রীর কাছ থেকে ৩০ টাকা করে ভাড়া আদায় করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্র’র চালকরা।

এ বাইপাস মোড়েই আলাপ হয় স্থানীয় কেওয়াটখালী ময়নার মোড়ের বাসিন্দা নাছির উদ্দিনের (৪৫) সঙ্গে। নাছির মাহেন্দ্র’র চালক। প্রায় ৬ বছর ধরে তিনি এ মহাসড়কে মাহেন্দ্র চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও কীভাবে নির্ভার হয়েই অটোরিকশা বা মাহেন্দ্র চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন এ চালক।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, ‘জিপি’ বাবদ দৈনিক ৩২০ টাকা আদায় করা হয় কয়েকটি স্পটে। এর মধ্যে চরপাড়া এলাকায় শাওন ১০০ টাকা, বাইপাস এলাকায় রুবেল, ফজলু ও রাজিবের নেতৃত্বে ৫০ টাকা, বৈলরে ৩০ টাকা এবং ত্রিশাল উপজেলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ১৪০ টাকা জিপি দিতে হয়।

পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক সদর উপজেলার দিগারকান্দার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম (৩৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘গাড়ি চললে টাকা দিয়া চলন লাগবো, কতা (কথা) একটাই। এটা আমগর না নেতাগর কতা (কথা)। নেতারাই আমগর (আমাদের) কাছ থেকে টাহা (টাকা) তুলে। পরে জায়গামতো ম্যানেজ করে। কথা কাজে ঠিক না থাকলেই ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। ’

নাম প্রকাশ না শর্তে বেশ কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্র’র মালিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘাটে ঘাটে জিপির নামে চাঁদা দিতে হয়। এরপর আবার চালকের খরচা রয়েছে। ঋণ করে থ্রি-হুইলার কিনে চাঁদা দিতে দিতেই ঋণের টাকা ওঠানো দায় হয়ে পড়েছে। ’

ময়মনসিংহ জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির ট্রাক বিভাগের সম্পাদক রবিউল হোসেন শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় সড়কে রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না। পুলিশ কঠোর হলেই এ নিষেধাজ্ঞা কাগজে-কলমে বাস্তবায়ন সম্ভব। পাশাপাশি জিপির নাম করে পয়েন্টে পয়েন্টে চাঁদা তোলা বন্ধেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ’

জানতে চাইলে ময়মনসিংহের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) কাজী আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহাসড়কে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার বন্ধে নিয়মিত আমাদের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আর জিপির টাকা তোলার কোনো নিয়ম নেই। স্পটে স্পটে চাঁদা তোলার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৯
এমএএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।