ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মায় অবৈধ স্পিডবোটে বাড়ছে দুর্ঘটনা, নীরব কর্তৃপক্ষ

সাজ্জাদ হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯
পদ্মায় অবৈধ স্পিডবোটে বাড়ছে দুর্ঘটনা, নীরব কর্তৃপক্ষ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে চলাচল করে চার শতাধিক স্পিডবোট। ছবি: বাংলানিউজ

মুন্সিগঞ্জ: দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে চলাচল করে চার শতাধিক স্পিডবোট। এগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই, সবই চলছে অবৈধভাবে। তাই প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে বিষয়টি নিয়ে নীরব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

নৌরুটে স্পিডবোটডুবিতে দুর্ঘটনার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। নিবন্ধনবিহীন, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন এসব স্পিডবোটে চড়ে যাত্রীরা হারিয়েছেন প্রিয়জনকে, আবার অনেকে আছেন নিখোঁজের তালিকায়।



খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্পিডবোট ঘাট নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই ও স্পিডবোট ঘাটের দায়িত্বের ব্যাপারে সবাই এড়িয়ে যেতে চায়। কয়েক বছর আগে চালু হওয়া নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্থগিতের ব্যাপারে স্পিডবোট ঘাট ও ডিজি শিপিং সহযোগিতার অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।


অভিযোগ করে যাত্রীরা বাংলানিউজকে জানান, স্পিডবোটগুলোতে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট থাকে না। মাঝ পদ্মায় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিদিনকার ঘটনা। স্পিডবোট উল্টে গিয়ে অনেকেই হারিয়েছেন স্বজনদের। অনেকে মরদেহই পাননি। উপযুক্ত বয়স ও অদক্ষ চালকের মাধ্যমে চলে এসব স্পিডবোট। ফিটনেস পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। যাত্রী চাপ বেশি থাকলে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। রাতের অন্ধকারে অনেক সময় এসব স্পিডবোট চলে। এজন্য প্রতিদিন বাড়ছে দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্পিডবোট নিবন্ধনের ব্যাপারে মন্ত্রী ও সচিবদের মধ্যে সভায় আলোচনা হয়েছে। নিবন্ধনের ব্যাপারে দু’টি বিষয় রয়েছে। শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ী ঘাটের স্পিডবোটগুলো ডিজি শিপিংয়ের নিবন্ধন করার কথা ছিল। নিবন্ধন করার জন্য চালকরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে না এটাই স্বাভাবিক। এখন আমরা চাইছি বিআইডাব্লিউটিএ থেকে নিবন্ধন করার জন্য। ডিজি শিপিং না করলেও বিআইডাব্লিউটিএ'র মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বর্তমানে শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ী ঘাটে যেসব স্পিডবোট আছে তার নিবন্ধনের কোনো কাগজপত্র ডিজি শিপিং ও বিআইডাব্লিউটিএ'র কাছে নেই।
 

তিনি আরও বলেন, বিআইডাব্লিউটিএ একটি বড় প্রতিষ্ঠান, কিন্তু বর্তমানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। আগে দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকলেও তিন মাস আগে একজন বদলি হয়ে যায়। এখন যিনি আছেন তিনি ঢাকা অফিসে থাকেন। তাকে দিয়ে মূলত দূষণরোধে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা চলে। ঈদের সময় কিংবা যখন ঘাটে চাপ পড়ে তখন মোবাইল কোর্টের সহায়তা নেওয়া হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভিযান পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধও করা হয়। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে চলাচল করে চার শতাধিক স্পিডবোট।  ছবি: বাংলানিউজশিমুলিয়া ঘাট বিআইডাব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার শাহ আলম বলেন, শিমুলিয়া ঘাটের স্পিডবোটের নিবন্ধন নেই। অনেক আগে এসব নিবন্ধন করার জন্য চেষ্টা করা হয়ছিল। সেসময় ডিজি শিপিং থেকে একজন ইন্সপেক্টর এসব স্পিডবোট নিবন্ধন করার জন্য ঘাট এলাকায় অবস্থান করছিল। কিন্তু তাকে ইজারাদার ও চালক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে সহযোগিতা না করার কারণে তিনি ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে এভাবে নিবন্ধন ছাড়াই চলছে এসব স্পিডবোট।
 

বিআইডাব্লিউটিএ (শিমুলিয়া ঘাট) সহকারী পরিচালক শাহদাত হোসেন বলেন, বিআইডাব্লিউটিএ থেকেও বলা হয় স্পিডবোট নিবন্ধন করার ব্যাপারে। স্পিডবোট চালকদের অভিযোগ নিবন্ধনের জন্য কর্মকর্তারা আসেন না। এখন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য নিবন্ধনের ব্যাপারে ডিজি শিপিং এলেও তারা সহযোগিতা পান না। শিমুলিয়া স্পিডবোট ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে নৌ-পুলিশ সদস্যরা। বৈরী আবহাওয়ার সময় লঞ্চের সঙ্গে স্পিডবোট বন্ধও করা হয়। তবে এগুলো বন্ধের জন্য নৌ-পুলিশকে অবগত করা হয়। এখন যদি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণলায় থেকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে এ সমস্যার সমাধান হবে।


মেদেনীমন্ডল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও শিমুলিয়া স্পিডবোট ঘাটের ইজারাদার আশরাফ হোসেন বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে ২শ ২০টি ও কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ২শ স্পিডবোট রয়েছে। স্পিডবোট নিবন্ধনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলেছি।

সচিবালয় গিয়ে নিবন্ধন করাতে অনীহা চালকদের- এমন দাবি করে তিনি বলেন, ৪০-৫০টি স্পিডবোটের নিবন্ধন রয়েছে। আর চালকের ক্ষেত্রে 'দক্ষতা' বুঝে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর ট্রেনিং শেষে এরপর স্পিডবোট চালনা করে। দক্ষ একজন চালকের সঙ্গে হেলপার থেকে তারপর চালক হয়। মাঝে মধ্যে স্পিডবোটের ইঞ্জিনের পেট্রোলে ভেজাল থাকে, চালুর সময় বন্ধ হয়ে যায়। স্পিডবোট দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক আরেকটি স্পিডবোট গিয়ে যাত্রী উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ঈদের আগে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচলে ঘাট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়। যদি সেরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে জেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৯
এসএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।