ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুরনো অবকাঠামোয় নিশ্চিত হচ্ছে না ‘পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা’

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯
পুরনো অবকাঠামোয় নিশ্চিত হচ্ছে না ‘পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা’ হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরের বাইরের ছবি

রাজশাহী: পুরনো অবকাঠামোর কারণে ‘পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরের। একই অবকাঠামোতে দীর্ঘ ৩৫ বছর পার করতে চলেছে দেশের অন্যতম অভ্যন্তরীণ এই বিমানবন্দরটি। তাই আধুনিকতার অভাবে বিমানবন্দরটি যে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে তা স্পষ্টই বলা যায়। 

নিরাপত্তাহীনতা ছাড়াও আধুনিক টার্মিনাল ভবন না থাকায় বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়তের সময় প্রতিদিন বিভিন্ন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন আকাশপথের যাত্রীরা। আমূল সংস্কারের পর উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহরে অবস্থিত অভ্যন্তরীণ এই বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিকরণ তাই এখন রাজশাহীবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

যদিও এর ঘোষণাও রয়েছে।  

কিন্তু ওই ঘোষণা পর্যন্তই থেমে আছে শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ে বর্ধিতকরণ, ভবন সংস্কার ও আন্তর্জাতিক রুটে সংযুক্ত করার সব পরিকল্পনা! স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি রাজশাহী অঞ্চলের বাস্তবতা বিবেচনায় শিগগিরই বিমানবন্দরটির অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ও নিরাপত্তা ঝুঁকি দূর করা উচিত।

এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইগামী বিমান ছিনতাই চেষ্টার পর সারাদেশের মতো রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। কিন্তু পুরনো অবকাঠামোর কারণে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। আগে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে আসা দর্শনার্থীরা টার্মিনাল ভবন পেরিয়ে ভেতরে চলে যেতেন অনায়াসেই। কিন্তু ঢাকা থেকে দুবাইগামী ওই বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার পর আপাতত দর্শনার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি করা হয়েছে।  

এখন দেহ তল্লাশি ছাড়া কাউকেই টার্মিনাল ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তবে এরপরও অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে অনেককে রানওয়েতে থাকা প্লেনের কাছে চলে যেতে দেখা যায়। আর একটু চোখ ফিরিয়ে বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশের নিরাপত্তাবেষ্টনী দিকে তাকালেই দেখা যায় ফাঁক গলিয়ে ওই পথ দিয়ে যে কেউ বন্দর সীমানায় ঢুকে যেতে পারবেন। সনাতন টার্মিনাল ভবনটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য তাই এখনও ঝুঁকিপূর্ণ।

আর বিমানবন্দরের প্রবেশমুখের পাশে যেখানে লাগেজ স্ক্যান করার স্থান রয়েছে সেই স্থানটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে খুবই সংকীর্ণ। অসন্তোষ রয়েছে ভিআইপি টার্মিনালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলের নেতারা আসেন। তাদের সঙ্গে অনেকেই দলবল নিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে টার্মিনাল ভবন পেরিয়ে রানওয়েতে ঢুকে যান। সিভিল এভিয়েশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের আটকাতে ব্যর্থ হন। এভাবে যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দেয়।

অভ্যন্তরীণ এই বিমানবন্দর দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন তিনটি ফ্লাইট ওঠানামা করে। কিন্তু লাগেজ হ্যান্ডিলিংয়ের আধুনিক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় টারমার্কের খুব কাছে যাত্রী চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। যে কারণে দেখা দেয় নিরাপত্তার ঘাটতিও।  

রাজশাহী-ঢাকা রুটের শামীম আহমেদ ও রুহুল আমিন নামের দুই যাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপদ ও আনন্দদায়ক ভ্রমণের জন্য এখন অনেক সচেতন মানুষই আকাশপথকে বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু রাজশাহী বিমানবন্দরটি এখনও সেকেলে। বলতে গেলে টার্মিনাল ভবন থেকে রানওয়ে পর্যন্ত কোথাও আধুনিকতার ছাপ নেই। আর নিরাপত্তার বিষয়টি আরও সুদৃঢ় হওয়া উচিত। টার্মিনাল ভবন থেকে এখনও প্রায় সময় অনেককেই রানওয়ের যেখানে প্লেন থামে সেখানে চলে যেতে দেখা যায়। এটি কখনও হওয়া উচিত নয়। এতে যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে বলেও মন্তব্য করেন তারা।  

এদিকে, শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার মনে হয়- ডোমেস্টিক বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি। তারপরও আনসার, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। কোথাও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিন্দুমাত্র ঘাটতি হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তা পূরণ করা হয়ে থাকে।

সেতাফুর রহমান জানান, রাজশাহী বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াও পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা সবসময় কাজ করছেন। যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তিনি নিজেই প্রতিদিন বিষয়গুলো তদারকি করেন। এর বাইরে আর কিছু বলতে পারবেন না বলেও জানান রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের এই ব্যবস্থাপক।

তবে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া শাহ মখদুম বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তাই রাজশাহী বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর ব্যাপক উন্নয়ন প্রয়োজন।  

একই সঙ্গে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে এটিকে দ্রুত আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা খুবই জরুরি। বিষয়টি নিয়ে তিনি সংসদে একাধিকবার কথা বলেছেন। এছাড়া মন্ত্রণালয়েও তার দাবির কথা জানিয়েছেন। গত বছর সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী বিমানবন্দর পরিদর্শন করে গেছেন। তাই বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকার বিবেচনা করবে বলে প্রত্যাশা করেন ফজলে হোসেন বাদশা।

** শাহ মখদুম বিমানবন্দর: ঘোষণাতেই আটকা আন্তর্জাতিকীকরণ
** যাত্রীর অভাবে বন্ধ হওয়া সেই বিমানবন্দরে টিকিট মেলে না

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।