ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিয়তি…

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯
নিয়তি…

ঢাকা: সড়কে সাঁই সাঁই গতিতে চলছে হরেক রঙের গাড়ি। ফুটপাতে ব্যস্ত পথচারীদের হনহন ছুটে চলা। বিকেলের কড়া রোদে তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংলগ্ন ফুটপাতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল কিছু দুঃখ। এই দুঃখ এক মা, আর তার তিন শিশু সন্তানের। এই দুঃখ দারিদ্র্যের।

দুই শিশুর দুধপানের বয়সই পেরোয়নি। যার পেরিয়েছে, সে ফুটপাতেই প্লাস্টিক পেতে শুয়ে থাকা মায়ের মাথায় হাত ছুঁইয়ে পানি দিচ্ছে।

খানিকটা মুখেও দিচ্ছে। অন্য দু’জন শুধু বুঝতে পারছে যে মায়ের কষ্ট হচ্ছে, তাই কেবল ‘মা, মা’ বলে ডেকে চলেছে।

রাজধানীর ফুটপাতে চলতে-ফিরতে প্রায়ই চোখে পড়ে এমন ‘ছোট ছোট’ দুঃখের ফ্রেম। তাই এই ‘অতি সাধারণ’ দুঃখের চিত্রে ফিরে চাইবার সময় কার? হেঁটে চলে ব্যস্ত নাগরিকের দল।

এরমধ্যেই থেমে যান সুজন মাহমুদ নামে এক পথচারী। কেন যেন তার মনটা কেঁপে ওঠে। সবাই যদি এভাবে ‘না দেখে’ চলে যায়, তিনটা শিশু তাদের মাকে নিয়ে কী করবে?অসুস্থ মমতাজ বেগম ও তার তিন সন্তানকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।  ছবি: বাংলানিউজসুজন মাহমুদ এগিয়ে যান অসুস্থ নারী ও তাকে ঘিরে বসা তিন শিশুর দিকে। অসুস্থ শরীরে যতখানি শক্তি ছিল, ততখানি দিয়ে সুজন মাহমুদকে সেই নারী বলেন তার দুর্দশার কথা।  

সেই নারী জানান, তার নাম মমতাজ বেগম (৩০)। স্বামীর নাম বাহাদুর। গ্রামের বাড়ি খুলনা। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় থাকতেন। তখন স্বামী যে টুকটাক আয় রোজগার করতেন, তা দিয়ে দিন চলে যেতো তাদের। এখন তার যে তিন সন্তান, তারা হলো রুপালী (৬) এবং মোহাম্মদ হাসান ও মোহাম্মদ হোসেন। হাসান-হোসেন যমজ, দুইজনের বয়স আড়াই বছর। এরা ভূমিষ্ট হওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান বাহাদুর। অভাবের সংসারে নিয়তি চাপিয়ে দেয় আরও দুর্দশা। এখন মাতৃত্বকালীন অসুস্থতা মমতাজকে চেপে ধরেছে। প্রথমদিকে কিছুটা কুলিয়ে উঠতে পারলেও এখন আর পারছেন না।

সুজন বুঝতে পারেন, মমতাজের শরীরে ডিহাইড্রেশনসহ নানা রোগ জেঁকে বসেছে। তখনই তিনি জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করেন। তাদের জানোনোর পর শাহবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে একটি ভ্যানে করে তিন শিশুসহ তাদের মাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সুজন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ওই নারীর বড় সন্তান কিছুক্ষণ পরপরই তার মাকে পানি খাওয়াচ্ছিল। অন্য দু’জন ‘মা মা’ বলে ডাকছিল। এই দৃশ্য দেখে বেশি খারাপ লাগছিল। কারণ আমারও দুই যমজ সন্তান আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৯
এজেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।