ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে চাঁদা আদায়ের ফাঁদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯
ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে চাঁদা আদায়ের ফাঁদ র‌্যাব সেন্টারে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়

ঢাকা: বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভিজিটিং কার্ড কৌশলে সংগ্রহ করা হতো। এরপর পছন্দের ব্যক্তিকে টার্গেট করে চলতো তার সম্পর্কে যাবতীয় খোঁজ-খবর নেওয়া। স্ত্রী-সন্তান কিংবা দুর্বল কোনো তথ্যকে কাজে লাগিয়ে ফোনে হুমকি দিয়ে দাবি করা হতো মোটা অংকের চাঁদা।

বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করে অভিনব পন্থায় মোবাইল ফোনে চাঁদা আদায়কারী এ সংঘবদ্ধ চক্রের ৯ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-৪। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানা এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটকরা হলেন- মিন্টু খান (৩৫), রাকিব খান ওরফে টিটুল (৩৪), জামাল শেখ (৪৩), রবিউল ইসলাম (৩৪), সোহেল হাওলাদার (২৬), শামিম খান (১৯), বিল্লাল খান (৩৫), আব্দুল মোমিন (২৮), রাব্বি হোসেন (২৪)।

রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, চক্রটি চার ধাপে প্রতারণার মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহ করতো। প্রথম ধাপে চক্রের সদস্যরা মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কিংবা ব্যবসায়ীদের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করতো। কখনো ভিজিটিং কার্ড তৈরির দোকান থেকে, বিভিন্ন অযুহাতে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভিজিটিং কার্ড নিতেন।

এর পরের ধাপের কর্মীরা সেসব ভিজিটিং কার্ড থেকে কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে তার বিষয়ে বিষদ তথ্য সরবরাহ করতেন। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির ঠিকানা, পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তানদের নাম, সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, সম্পদের আনুমানিক হিসাব কিংবা ওই ব্যক্তির দুর্বল কোনো বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতেন।

তৃতীয় ধাপে চক্রের সদস্যরা মূলত মোবাইল অপারেটিং গ্রুপ। তারাই চাঁদা আদায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের কার্যক্রমের উপরই চাঁদা দাবি ও চাঁদা আদায়ের সফলতা নির্ভর করে।

তারাই বিভিন্ন উপায়ে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন পরিমাণে চাঁদা দাবি করে। এক্ষেত্রে তারা এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম কিংবা পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ভয়-ভীতির প্রদর্শন করা হতো। কখনো স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মাকে অপহরণের ভয় দেখাতো।

চতুর্থ ধাপের কর্মীরা হত্যা ও অপহরণের ভয় ভীতি ও হুমকিতে কেউ চাঁদা দিতে সম্মত হলে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদার টাকা নিতেন।

র‌্যাব-৪ প্রধান বলেন, চাঁদা দাবির সময় তারা খুবই কমদামি মোবাইল ব্যবহার করতেন। চাঁদা আদায় শেষে সেই মোবাইল ও সিম ধ্বংস করে দিতেন। এর ফলে তাদের শনাক্ত করা কষ্টসাধ্য ছিলো। প্রান্তিক পর্যায়ে ভিক্ষুক ও রিকশা ড্রাইভারসহ বিভিন্ন সাধারণ মানুষের নামে সিম কিনে সেসব সিম দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছিলো চক্রটি।

চক্রটি ২০০৬ সাল থেকে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে আসছিল। তারা অপহরণ ও হত্যা ভয়ভীতি ছাড়াও বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা, বিভিন্ন কোম্পানি/নামিদামি প্রতিষ্ঠানের লটারি জয়ী হওয়া আবার কখনো জ্বিনের বাদশার পরিচয়ে অর্থ আদায় করতেন। প্রতারকদের কেউই অন্য কোনো পেশায় জড়িত নয়। তবুও তাদের কারো কারো বিলাসবহুল বাড়ি, মাইক্রোবাস, লেগুনার মালিক ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৯
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।