শনিবার (৩১ আগস্ট ) বিকেলে গণভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ১০টা বছরের মধ্যে আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
‘আজকে বাঙালিরা, যারা প্রবাসে থাকেন, তারাও সব সময় এ কথা বলেন যে, একসময় বাংলাদেশ শুনলেই আমাদের অনেক কথা শুনতে হতো। আজকে বাংলাদেশ শুনলে গর্বে আমাদের বুক ভরে যায়। যখন বলে যে, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে আজকে বলতে গেলে বাংলাদেশ এক নম্বর অবস্থানে চলে এসেছে। এই অর্জনগুলো করতে পেরেছি দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যে জাতির জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, কষ্ট করে গেছেন, তাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি সেটাই বিবেচনা করেছি। নিজে কী পাবো, না পাবো বা ছেলে-মেয়ে কী পাবে, না পাবে সে চিন্তা আমাদের ছিলো না। ’
‘আমরা দু’টি বোন সর্বান্তকরণে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়বার জন্য সব কিছু ত্যাগ করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর অনেকে বলেছিল এই স্বাধীন হয়ে কী হবে?… অর্থাৎ এ দেশের কোনো ভবিষ্যতই নেই। অর্থাৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ হবে, ব্যর্থ রাষ্ট্র হবে। ’
তিনি বলেন, ‘আমার একটা জিদ ছিল, যে করেই হোক এই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তোলা যেন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। যে বাঙালি অস্ত্র হাতে নিয়ে বিজয় অর্জন করতে পারে, সে বাঙালি দেশকেও গড়তে জানে, গড়তে পারে। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সেটা পারে কারা, যারা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত, আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, বিজয় অর্জনের সঙ্গে জড়িত সেই রাজনৈতিক দল যদি সরকারে আসে। অর্থাৎ যে জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা সংগ্রাম করেছি তারা যদি ক্ষমতায় থাকে শুধুমাত্র তারাই পারবে দেশ গড়তে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা স্বাধীনতা বিরোধী, আল বদর রাজাকারদের পদলেহন করে, খোষামোদী, তোষামোদী করে, পরাজিত শক্তির পদলেহন করে তারা দেশকে উঠতে দেবে না, তারা দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে দেবে না। ’
‘কারণ তারা তো পরাজিত শক্তির দোসর, তাদেরই তারা পদলেহন করে, কাজেই তারা কেন চাইবে বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। যে কারণে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। ’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে যাওয়া রুখে দিতে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
পড়ুন>>ত্যাগের আদর্শে ছাত্রলীগকে মানুষের মন জয় করার আহ্বান
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড কেন? তিনি এ দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে যান। এই স্বাধীনতা অর্জনের পরে মাত্র সাড়ে ৩ বছর তিনি হাতে সময় পেয়েছিলেন। এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, এই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে তিনি যেভাবে গড়ে তুলেছিলেন এটাও একটা বিরল ইতিহাস। ’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেইন, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জোবায়ের আহমেদ।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে তার হাতে বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল, শেখ রাসেলের প্রতিকৃতি তুলে দেয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতিকৃতি উপহার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
এমইউএম/এমএ/