ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কুমিল্লার মহাসড়কে অটোরিকশার অবাধ চলাচল, বাড়ছে দুর্ঘটনা

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
কুমিল্লার মহাসড়কে অটোরিকশার অবাধ চলাচল, বাড়ছে দুর্ঘটনা বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে দুমড়ে-মুচড়ে যায় অটোরিকশাটি/ফাইল ছবি

কুমিল্লা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার বিভিন্ন মহাসড়কে দিনের আলোতে প্রায়ই চলাচল করছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ব্যস্ত সড়কে দ্রুতগতির যানের সঙ্গে ‘নিষিদ্ধ’ এ যান খেই হারিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। যাতে প্রাণহানির মতো বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।

অথচ জাতীয় মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে।  

দেশের বাণিজ্যের ‘লাইফ লাইন’খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ৯৭ কিমি. অংশ, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কে ব্যাপক হারে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে।

এতে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে প্রায়ই বড় ধরনের দুঘর্টনা ঘটছে।  

হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, সিএনজি পাম্প স্টেশন থেকে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করার অনুমতি রয়েছে। এছাড়া দিনের অন্য সময়ে এসব অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে বিভিন্ন যানবাহনের সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে গত ১৮ আগস্ট (রোববার) বেলা পৌনে ১২টায় কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের লালমাই উপজেলার বাগমারা এলাকায় তিশা পরিবহনের একটি বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসের ত্রিমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৬ জনসহ মোট ৭ জন নিহত হন।

এর আগে ৩০ জুন (রোববার) দুপুর ১২টায় মুরাদনগরের ছালিয়াকান্দি বাজারের পাশে নিয়ামতকান্দি নামক স্থানে অটোরিকশা ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে রোজিনা (২০) নামে এক যাত্রী নিহত হন। ১৮ জুন (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে পিকআপ ভ্যানের পেছনে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় বাহরাইন প্রবাসীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন।

১১ জুন (মঙ্গলবার) সকাল ৬টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার এলাকায় স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অপর প্রান্ত থেকে সড়কে দ্রুতগতিতে আসা মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে এক যাত্রী নিহত হয়।

১৭ মে (শুক্রবার) সকাল ৮টায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকায় অটোরিকশার চাপায় ডলি আক্তার (৩৬) নামের এক নারী নিহত হন। ৭ মে (মঙ্গলবার) রাতে হোমনায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিচে চাপা পড়ে সালাম মৃধা (৪৫) নামের এক অটোরিকশা মিস্ত্রী নিহত হয়েছেন।

৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সকাল ১০টার দিকে সদর দক্ষিণে দোয়েল সুপার পরিবহন বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে সাহেব আলী (৫২) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তার আগে ৩ ফেব্রুয়ারি (রোববার) দুপুরের দিকে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা দক্ষিণ বাজার নামক স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন নিহত হন।

আর বছরের প্রথম মাসে ১৮ জানুয়ারি (শুক্রবার) বিকেল ৩টার দিকে  বরুড়া উপজেলায় মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে মো. সুমন মিয়া (৩২) নামের এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছে। আগের দিন ১৭ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৫টার দিকে কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়কের লাকসাম উপজেলার চন্দনা বাজারে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ইদ্রিস (৫০) ও মো. আলম (৩২) নামের দুইজন যাত্রী নিহত হয়েছেন।  

একই মাসে ১৪ জানুয়ারি দুপুর ২টায় কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের বরুড়ার নলুয়া চাঁদপুর নামক স্থানে কাভার্ডভ্যানের চাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক (৩২) নিহত হন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভোরের দুই ঘণ্টা ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও এই সড়কে প্রায় সময় আইন লঙ্ঘন করে এসব অটোরিকশা চলতে দেখা যায়। এই মহাসড়কের চান্দিনা, বুড়িচং ও চৌদ্দগ্রামের কিছু কিছু অংশে এ প্রবণতা বেশি বলে জানা যায়। মহাসড়কটিতে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চলাচল করে। ফলে যেকোনো সময় বড় দুঘর্টনার আশঙ্কা থাকে।

বাস চালক ইয়াছিন মিয়া জানান, এই মহাসড়কে ভোরে গাড়ি চালানো বেশ ভয়ের বিষয়। কারণ গ্যাস নেওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো এ সময় দুই ঘণ্টা চলাচল করে। আর গ্যাস নেওয়ার নামে অনেক অটোরিকশা চালক ওই সময় যাত্রী পরিবহন করেন।  

মানবাধিকারকর্মী ইমরান জানান, কুমিল্লার আঞ্চলিক সড়কগুলোর অবস্থা ভালো না। সেখানে আবার অবাধে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। রাস্তাও কম প্রশস্থ। একইসঙ্গে চলে বড় বড় যানবাহনও। ফলে প্রায়ই দুঘর্টনায় ঝরে প্রাণ।

চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ওসি আবুল কালাম আজাদের দাবি, সকালের ওই দুই ঘণ্টা ছাড়া জাতীয় এ মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে না। হাইওয়ে পুলিশ এ বিষয়ে বেশ তৎপর রয়েছে।

অথচ প্রাপ্ত তথ্য দিচ্ছে ভিন্ন চিত্র। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে প্রায় ৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুঘর্টনায় নিহত হয়েছেন ১১৭ জন চালক, যাত্রী ও পথচারী। আহত হয়েছেন প্রায় ৩২১ জন যাত্রী। দুঘর্টনায় প্রায় দেড় শতাধিক যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এসব দুঘর্টনার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের মধ্যে অন্যতম একটি হলো মহাসড়কে অবৈধভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।