ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাওনা টাকা চাওয়ায় বন্ধুকে খুন

মাহফুজুর রহমান পারভেজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
পাওনা টাকা চাওয়ায় বন্ধুকে খুন

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মল্লিকপাড়া গ্রামের নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল জামে মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে গত ২২ আগস্ট গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

তার বাড়ি খুলনার তেরখাদা থানার রাজাপুর গ্রামে। তিনি রাজাপুর এলাকার আফতাব ফরাজির ছেলে।

গত ২৬ জুলাই তিনি মল্লিকপাড়া গ্রামের ওই মসজিদটিতে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান।

হত্যাকাণ্ডের পর জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) নির্দেশে ক্লু-লেস (কোনো ক্লু ছাড়াই) এ মামলার তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আসামিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং আসামি পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।  

সূত্রমতে, মূলত আর্থিক লেনদেন নিয়েই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন দিদারুল। তার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে আর্থিক লেনদেন হয় তার চতুর বন্ধু ঐশর্ঘের (২৩) (ছদ্মনাম)। পরবর্তীতে দিদারুল জানতে পারে, তার বন্ধু যে ধরনের ব্যবসা করতে চায় এসব ব্যবসা বৈধ নয়। পরে সেই ব্যবসা থেকে সরে আসতে এবং বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে দেওয়া টাকা দিদারুল ফেরত চায়। এতেই তাকে হত্যা করতে পরিকল্পনা সাজায় ঐশর্ঘ।

পরিকল্পনা মতে, হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও দিদারুলের সঙ্গে দেখা করে তার সঙ্গে চা খেয়ে হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়ে যায় ঐশর্ঘ। পরে হত্যাকাণ্ডের দিন এশার নামাজের পর রাতের খাবার প্রস্তুত করার সময় দিদারুলকে কিছু নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়। এতেই দিদারুল অচেতন হয়ে পড়েন। তার সেই রাতের খাবারও হত্যাকাণ্ডের পর সেই অবস্থাতেই উদ্ধার করে পুলিশ।  

দিদারুল অচেতন হয়ে পড়লে তাকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে একটি চিরকুট লিখে ফেলে রেখে দরজায় তালা দিয়ে ঘাতক পালিয়ে যায়।

এর আগে কুমিল্লায় হত্যাকারী ও দিদারুল একইসঙ্গে পাশাপাশি মসজিদে ইমামতিও করেছেন। কিলিং মিশনে ঐশর্ঘ একাই অংশ নেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

দিদারুলের পারিবারিক সূত্র জানায়, দিদারুল তার এক বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসা করবে বলে বিনিয়োগের জন্য দু’টি গবাদীপশু কিছুদিন আগে বিক্রি করে। এছাড়াও সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকার কাছাকাছি সে বিনিয়োগ করবে বলে পরিবারকে জানিয়েছিল।  

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এই টাকা থেকেই ঐশর্ঘকে বিনিয়োগের জন্য টাকা দেয় দিদারুল। পরে অবৈধ ব্যবসা করবে জেনে সেখান থেকে সরে আসতে চাওয়ার পাশাপাশি নিজের টাকাও ফেরত চায় দিদারুল। আর এতেই পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করা হয়।

আরেকটি সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর ফরিদপুরের দিকে গাঁ ঢাকা দেয় ঐশর্ঘ। হত্যকাণ্ডের পর থেকে নিজের পরিচয়ও একের পর এক গোপন করে সে। শেষ পর্যন্ত নিজের পরিচয় ঐশর্ঘ হিসেবে জাহির করলেও পুলিশ তার সঠিক পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

স্থানীয় লোকজন ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা জানান, নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল মসজিদের আগের ইমাম চলে যাওয়ায় ২৬ জুলাই পাশের ছোট কাজিরগাঁও মসজিদের ইমাম দিদারুল এখানে নিয়োগ পান। এই মসজিদে জুমার নামাজ পড়িয়ে তিনি প্রশিক্ষণের কথা বলে ছুটি নেন।  

গত ২১ আগস্ট বিকেলে ছুটি থেকে ফিরে আবার নামাজ পড়ান তিনি। এরপর ২২ আগস্ট ভোরে মুসল্লিরা ফজরের নামাজ আদায় করতে এসে ইমাম না আসায় তার রুমে গিয়ে ইমামের মরদেহ দেখতে পান। তারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

সোনারগাঁ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. অহিদ উল্লাহ মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, শ্যামলা বর্ণের ২৬ বছর বসয়ী লোকটির নাম দিদারুল ইসলাম। ধারালো ছুড়ি দিয়ে গলা কেটে তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়। এছাড়া পিঠের বাম অংশের ঘাড়ের নিচে কাটা দাগ, বাম বাহুতে চার থেকে পাঁচটি লম্বা টাকা দাগ, গলাসহ সাড়া শরীর রক্তাক্ত ছিল। পাশাপাশি উভয় হাত ও পায়ের আঙ্গুল বাঁকানো ছিল। মরদেহটি উদ্ধারের সময় লুঙ্গি ও বিছানাপত্র রক্তমাখা ছিল।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, ক্লু-লেস এ মামলাটির বিষয়ে তদন্ত চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
এসএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।