ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেঘনা গিলছে তালুকদার বাড়ি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
মেঘনা গিলছে তালুকদার বাড়ি মেঘনা গিলছে তালুকদার বাড়ি। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের ঐতিহ্যবাহী আবুল হোসেন তালুকদার বাড়ি মেঘনা গিলে খাচ্ছে। ভয়াবহ ভাঙনে বাড়ির বেশিরভাগ অংশ এখন নদীগর্ভে। ওই বাড়ির আশ-পাশেও ব্যাপকভাবে ভাঙছে। আতঙ্ক পুরো এলাকাজুড়ে। ভাঙন ঠেকাতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও, তা যথেষ্ট নয়।

সোমবার (২৬ আগস্ট) উপজেলার ফলকন গ্রামের ভাঙন কবলিত এলাকা গিয়ে দেখা যায়, তালুকদার বাড়ির উঠানে এখন মেঘনা নদী। প্রায় ১০ একর বাড়ির বেশিরভাগ অংশ এখন রাক্ষুসে মেঘনার পেটে।

গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে বাড়ির নারিকেল-সুপারি বাগান তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে দু’টি বসতঘর। এখন চারটি পাকা বসতঘর ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

তালুকদার বাড়ির বাসিন্দারা বাপ-দাদার বসতভিটে হারিয়ে এখন শোকে পাথর। বাড়ির শেষ চিহ্ন দেখতে আত্মীয় স্বজনরা আসছেন। তবে কারও সান্ত্বনা দেওয়ার যেন ভাষা নেই। সবাই নির্বাক।

সম্প্রতি ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে একই গ্রামের ১৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী চেয়ারম্যান বাড়ি। নদীতে ওই বাড়ির আট পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছেন। পাশেই তালুকদার বাড়ি, এখন ওই বাড়ি বিলীন হওয়ার পথে। চেয়ারম্যান বাড়ির উত্তর পাশেই মীর বাড়ি ভাঙতে শুরু করেছে। ভাঙনে মুখে সাদেক মাস্টার বাড়িও।

তালুকদার বাড়ির বাসিন্দা হাজিরহাট উপকূল কলেজের সহকারী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন তালুকদার বলেন, প্রায় শত বছরের পুরনো বাড়িটি নদীতে ভাঙছে। ভাঙনে কেবল বাড়িঘরই নয়; ছিন্ন হচ্ছে পরিবারিক ও সামাজিক বন্ধন। গত এক দশকের ভাঙনে তাদের পরিবারের ১২০ একর ফসলি জমি নদীতে হারিয়েছেন। লুধূয়া বাজারের ২৫টি দোকানঘর বিলীন হয়েছে। ফসলি জমি বাজারের দোকন নদীগর্ভে গেলেও দুঃখ অনুভব করিনি। কিন্তু বসতভিটে হারানোর শোক সইতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ওই বাড়ি অনেক স্মৃতি প্রতি মুহূর্তে তাড়া করবে, যন্ত্রণা দেবে। ঠিকাদারের অবহেলায় তাদের বাড়ির বিশাল অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

চর ফলকন উইনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাজী হারুনুর রশীদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে, আষাঢ়-শ্রাবণ গত দুই মাসে চর ফলকন গ্রামের অন্তত দুইশ পরিবার ভাঙনে কবলে নিঃস্ব হয়েছেন। তালুকদার বাড়ি ভাঙছে, মীর বাড়ি ভাঙতে শুরু করেছে। সাদেক মাস্টার বাড়ি ভাঙনের মুখে। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়টিও বিলীন হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত বালু ভর্তি জিও ব্যাগ স্থাপন জরুরি।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। ভাঙনের গতি অনেক বেশি; তবুও ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেছেন, বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন ঠেকাতে লুধূয়া এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। যে স্থানে ভাঙন সে স্থানেই ব্যাগ ডার্ম্পিং করা হবে। বর্ষা শেষে নভেম্বরে রামগতি ও কমলনগরের ৩২ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। কাজ বাস্তবায়ন করবে সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এসআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad