ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনায় নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের দাম!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
খুলনায় নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের দাম! দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: ‘সাধারণ জনগণের হয়ে কথা বলার কেউ নাই। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দর এখন অসহনীয় পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যারা আছেন তাদের কোনো কাজ দেখতে পাচ্ছি না।’

আক্ষেপ করে খুলনার রূপসার নতুন বাজারে আসা ক্রেতা খালিদ হোসাইন রাজন এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, সপ্তাহ খানেক ধরে বাড়তির দিকে নিত্যপণ্যের দাম।

আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, শাক-সবজিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। জীবন যাপনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের।

ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের আসা একজন ক্রেতা হাসান বলেন, হঠাৎ করে চাল ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে বাড়ছে মাছের দামও। আয়ের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে কাটছাঁট করতে হচ্ছে খাদ্য তালিকায়। মাঝে মধ্যে মাছ না কিনেই বাজার থেকে ফিরে আসতে হয়।

নির্মাণ শ্রমিক সাজু তরফদার বলেন, পণ্য ক্রয়ের যে ফর্দ নিয়ে ঘর থেকে বের হই বাজারে এসে সে অনুযায়ী পণ্য কিনতে পারি না। বাজার তালিকার অর্ধেক পণ্য নিয়েই ঘরে ফিরতে হচ্ছে। জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। আমরা গরীব মানুষ আমাদের কষ্টের কথা শোনার কেউ নেই।

কয়েকজন বেসরকারি চাকরিজীবী আক্ষেপ করে জানান, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে না। এ অবস্থায় তারা নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারছেন না তারা। বাসাভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। ব্যয় বাড়লেও আয় না বাড়ায় সঞ্চয় ভেঙে জীবন বাঁচানোর লড়াই করছেন অনেকে।

তাদের অভিযোগ, আমদানি কম, বৈরি আবহাওয়া অথবা উৎপাদন কম-এসব যুক্তি দেখিয়ে বাড়ানো হয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। এগুলো স্রেফ অজুহাত। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ না। বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পায়। মনিটরিং থাকলে এমনটি হতো না।

পশ্চিম টুটপাড়া এলাকার মুদি দোকানি মতলব বলেন, হঠাৎ করে নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা দাম শুনে রেগে যান। নানা প্রশ্ন তোলেন। আমাদের তো আসলে কিছুই করার নেই। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনে এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিক্রি করতে হয়।

সরেজমিনে খুলনার বৃহৎ বাজার বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে যে সয়াবিন তেল ৮১ টাকা বিক্রি হতো তা এখন ৮৪-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাম ওয়েল ৫৭ থেকে বেড়ে ৬৫-৬৬ টাকায়, সুপার পাম ওয়েল ৬২ থেকে বেড়ে ৬৮ টাকায়, খোলা আটা ২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪ টাকায়, ময়দা ২৪ থেকে বেড়ে ২৬ টাকায়, চিনি ৫২ থেকে বেড়ে ৫৬ টাকায়, ডাল ৩৯ থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকায়, মানভেদে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সপ্তাহখানেক আগে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৪২ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৩২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের মসলার দাম ও কোরবানির ঈদ থেকে বেড়ে গেছে।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা বলেন, বৃষ্টির কারণে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

মেসার্স মুরাদ ট্রেডিং এর পাইকারি বিক্রেতা জিয়াউল হক মিলন বাংলানিউজকে বলেন, গম পাওয়া যাচ্ছে না তাই আটা ময়দার দাম বেড়েছে। ভোজ্য তেল ঢাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে খুলনায়ও বেড়ে গেছে।

নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।  ছবি: বাংলানিউজ

একই বাজারের মদিনা ইন্টারপ্রাইজের জিয়া উদ্দিন বলেন, বাজেটে ভ্যাট বেড়ে যাওয়ায় নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

নাগরিক নেতা গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন বলেন, বাজারে অনেক পণ্যের দামে দৃশ্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। চাল ছাড়া প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে না পারলে এবং বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে দেশের উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতির প্রচারণা মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে।

তার অভিযোগ, আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। আর এর মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

এ অবস্থায় সরকারের কাছে তিনি সাধারণ মানুষের আয় বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া, নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা, শিক্ষা-চিকিৎসা-যাতায়াত ব্যয় ও নগরবাসীর বাড়িভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানান।

এদিকে সঠিকভাবে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে এসব দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন বলে অভিযোগ করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তবে হঠাৎ খুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বিষয়টি মানতে নারাজ খুলনা জেলা বাজার কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আপনাদের মূল্য তালিকার সঙ্গে আমাদের মিলবে না।

পেঁয়াজ রসুনসহ মসলার দাম বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলোর দাম কোরবানির ঈদের সময় বেড়েছে। মূলত যারা আমদানি করেন তাদের একটি চক্র ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে ইচ্ছা করে দেরি করে। এতে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়, বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। বিষয়টি আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এমআরএম/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।