ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২৪ আগস্ট ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
২৪ আগস্ট ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস ভ্যানে রাখা ইয়াসমিন মরদেহ, ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুর: ২৪ আগস্ট। দিনাজপুরের ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে কতিপয় বিপথগামী পুলিশ সদস্যের ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয় কিশোরী ইয়াসমিন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন দিনাজপুরের মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ৭ জন। সেদিন থেকেই সারাদেশে একযোগে ২৪ আগস্ট ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট ভোরে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওগামী হাছনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি নৈশকোচের সুপারভাইজার ইয়াসমিন নামে এক তরুণীকে দিনাজপুরের দশমাইল মোড়ে নামিয়ে দেয় এবং এক চায়ের দোকানদারকে বলে সকাল হলে তরুণীটিকে যেন দিনাজপুর শহরগামী বাসে উঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সেখানে পৌঁছে টহল পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান।

পুলিশ সদস্যরা চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসে থাকা তরুণী ইয়াসমিনকে নানা প্রশ্ন করে একপর্যায়ে দিনাজপুর শহরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোর করে পুলিশ ভ্যানে তুলে নেয়। এরপর তারা দশমাইল সংলগ্ন সাধনা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায়।  

এ ঘটনায় দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে দোষীদের শাস্তির দাবি করা হয়। ২৬ আগস্ট রাতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জনতা কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে। ২৭ আগস্ট সকাল থেকে প্রতিবাদী মানুষেরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। দুপুর ১২টার দিকে কয়েক হাজার জনতা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিতে যায়। এ সময় পুলিশ বিনা উস্কানিতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে মারা যায় সামু, কাদের, সিরাজসহ ৭ জন। আহত হয় প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ। শহরের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে ১৪৪ ধারা (কারফিউ) জারি করা হয়। শহরে নামানো হয় তৎকালীন বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)। দিনাজপুর থেকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ১৩ উপজেলার সব পুলিশকে একযোগে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।  

ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি ৩টি আদালতে ১২৩ দিন বিচার কাজ শেষে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মতিন মামলাটির রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে আসামি পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মঈনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিকআপ ভ্যানচালক অমৃত লাল বর্মনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান ‘৯৫-এর ৬ (৪) ধারায় ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেন।

আলামত নষ্ট, সত্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মঈনুলকে আরও ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।  

অপরদিকে দণ্ডবিধির ২০১/৩৪ ধারায় আলামত নষ্ট, সত্য গোপন, অসহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি দিনাজপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মোতালেব, ডা. মহসীন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহতাব, উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বপন চক্রবর্তী, উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর, উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মতিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দেন।  

চাঞ্চল্যকর ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয় ৮ বছর পর অর্থাৎ ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।  

২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর মধ্য রাত ১২টা ১ মিনিটে মামলার অন্যতম আসামি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার বিশ্রামপাড়ার জসিমউদ্দীনের ছেলে উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মইনুল হক, নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চন্দনখানা গ্রামের এসএম খতিবুর রহমানের ছেলে কনস্টেবল আব্দুস সাত্তারকে রংপুর জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।  

২০০৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মধ্য রাত ১২টা ১ মিনিটে মামলার অপর আসামি নীলফামারী সদর উপজেলার রাজপুর গ্রামের লক্ষ্মীকান্ত বর্মনের ছেলে পুলিশের পিকআপ ভ্যানচালক অমৃত লাল বর্মনকে রংপুর জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।

প্রতি বছর দিনাজপুরে সর্বদলীয়ভাবে দিবসটিকে পালনের জন্য ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম ২৪ আগস্ট তার বাড়িতে দুঃস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও দোয়ার আয়োজন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
আরএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ