ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যাত্রীবেশে অপহরণ-ছিনতাই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
যাত্রীবেশে অপহরণ-ছিনতাই

ঢাকা: কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার কথা বলে প্রাইভেটকার ভাড়া করে যাত্রীবেশে চড়ে বসেন অপহরণকারীরা। মাঝপথে চক্রের অন্য সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গাড়ি থামায়। এরপর তারা গাড়িতে উঠেই অস্ত্রের মুখে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। নির্ধারিত স্থানে চালককে বেঁধে রেখে চলতে থাকে নির্যাতন।

অপহৃত চালকের ফোন নম্বর থেকেই পরিবারের সদস্যদের ফোন দিয়ে চাইতে থাকেন মুক্তিপণ। কখনো মুক্তিপণের বিনিময়ে চালক ছাড়লেও গাড়ি ফিরিয়ে দেয় না।

আবার গাড়ি ফিরিয়ে দিতে চাইলেও আবারও মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে চক্রটি।

সোমবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে মাদারীপুর যাওয়ার কথা বলে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া নেয় দু’জন। সন্ধ্যায় যাত্রীবেশে গাড়িতে চড়ে বসেন অপহরণকারী চক্রের দুই সদস্য। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, দিনগত রাত ২টার দিকে কাঠালবাড়ি এলাকা থেকে আরও কয়েকজন গাড়িটি থামিয়ে গাড়িসহ চালককে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

অপহরণকারীরা চালকের পরিবারকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করলে র‌্যাব-৪ এ একটি অভিযোগ করা হয়। এর ভিত্তিতে টানা অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দিনগত রাতে মাদারীপুরের দুর্গম চর থেকে চালক এনায়েত উল্লাহকে (৩২) উদ্ধার করা হয়। এসময় অপহরণকারী চক্রের চার সদস্যকে আটকসহ গাড়িটি উদ্ধার করে র‌্যাব।

আটকরা হলেন- শাহ জালাল (৩২), ফয়সাল (২২), জয়নাল হাজারী (৩০) ও রাকিব (২২)।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

র‌্যাব জানায়, ভিকটিম এনায়েত উল্লাহ সম্প্রতি ১২ লাখ টাকা দামে অগ্রিম ৬ লাখ টাকা দিয়ে একটি নতুন প্রাইভেটকার কেনেন। বাকি টাকা প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা কিস্তিতে শোধ করার কথা ছিল। সেদিন তার কাছে দুই মাসের কিস্তির ৭০ হাজার টাকা ছিল।
চক্রটি সবসময় রেন্ট এ কারের নতুন গাড়ি এবং চালকের আর্থিক অবস্থা দেখে টার্গেট করতো। ঘটনার দিন মাদারীপুরে যাওয়ার জন্য ভিকটিম এনায়েতের গাড়িতে যাত্রীবেশে দু’জন চড়ে বসেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাড়িটি কাঠালবাড়ি এলাকায় গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তিনজন গাড়িটিকে থামার সিগনাল দেয়। গাড়ি তল্লাশির নামে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা।

মোজাম্মেল হক বলেন, চক্রের সদস্যরা ভিকটিম এনায়েতকে মাদারীপুরের দত্তপাড়া চর এলাকায় কাশবনে ছোট একটি ঘরে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালাতে থাকেন। গাড়িটি তারা ফরিদপুরের সদরপুরে নিয়ে যায়। ভিকটিম এনায়েতকে মারধর করে তার মোবাইল থেকে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে ভিকটিমের পরিবার থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানে নামে র‌্যাব-৪। প্রায় তিন দিন টানা অভিযানের পর দুর্গম চর থেকে এনায়েতকে উদ্ধারসহ চারজনকে আটক করা হয়।

তিনি আরও বলেন, চক্রের সমস্যরা যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে বিভিন্ন পন্থায় অপহরণ ও ছিনতাই করে আসছিল। কখনো গাড়িতে উঠেই চালকের হাত-পা বেঁধে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়, কখনো তারা অস্ত্রের মুখে চালককে নির্ধারিত স্থানে যেতে বাধ্য করে। কখনো মাঝপথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তল্লাশির নামে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তারা।

মোজাম্মেল হক বলেন, ভিকটিম এনায়েতকে অপহরণের সঙ্গে দশজনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি। চারজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। আশা করছি, শিগগিরই তাদের আটক করা সম্ভব হবে।

ভিকটিম এনায়েত বলেন, চক্রের কেউ আমার পূর্ব পরিচিত না। তারা আমাকে ফোন করে গাড়ি ভাড়ার জন্য ঠিক করে। কাঠালবাড়ি এলাকায় গেলে টর্চলাইট দিয়ে আমাকে থামার নির্দেশ দেয়। এরপর গাড়িসহ আমাকে নিয়ে বেঁধে নির্যাতন করতে থাকে।

বাংলদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯ 
পিএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।