ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কাজ শেষ না হতেই ভেঙে যাচ্ছে আড়াই কোটি টাকার সড়ক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
কাজ শেষ না হতেই ভেঙে যাচ্ছে আড়াই কোটি টাকার সড়ক কাজ শেষ না হতেই ভেঙে যাচ্ছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সড়ক। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: কাজ শেষ না হতেই ভেঙে যাচ্ছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার প্রায় আড়াই কোটি টাকার সংযোগ সড়ক। অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ফলে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারী পথচারীদের।

লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় নষ্ট হওয়া সড়কগুলো সংস্কার করতে ফ্লাড ডিজাস্টার ড্যামেজ রুলার রোড ইনফ্লাকচার ফান্ড (এফডিডিআরআরআইএফ) প্রকল্পের আওতায় বরাদ্ধ দেয় সরকার। লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় ১৭টি প্রকল্পের বিপরীতে ৪০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্ধ আসে গত অর্থবছরে।

যা বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। ১৭টির মধ্যে মাত্র ৬টির কাজ শেষ হলেও ১১টি চলমান রয়েছে। পুরো প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ হলেও অর্থিক অগ্রগতি দেখানো হয় ৫৯ শতাংশ।

এ প্রকল্পের আওতায় আদিতমারী উপজেলার বুড়িরবাজার মহিষখোচা সংযোগ সড়কের ৫.০৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করতে বরাদ্ধ দেওয়া হয় ২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭২ টাকা। যার মধ্যে বুড়িরবাজারে ১০০ মিটার ও মহিষখোচা বাজারে ৫০০ মিটার আরসি ঢালাই ধরা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছেন স্থানীয় ঠিকাদার আব্দুল হাকিম। কিন্তু তার কাছ থেকে কমিশনে ক্রয় করে কাজ করেন ঠিকাদার দাউদ আলী সরদার।

কাজটি শুরু থেকে স্থানীয়রা নিম্নমানের কাজের অভিযোগ করে এলেও কর্নপাত করেননি প্রকৌশলীরা। নিম্নমানে ইট, পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করে দায়সারা কাজ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কের উভয় পাড়ে মাটি দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ফলে কাজ শেষ না হতেই ৫ কিলোমিটারের এ সড়কটির প্রায় ১২/১৫টি স্থানে ভেঙে গেছে। সড়ক ডেবে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু স্থানে। কাজ শেষ না হতেই ভেঙে যাচ্ছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সড়ক।  ছবি: বাংলানিউজজোড়াতালি দিয়ে সড়কটিকার  সংস্কার করলেও করা হয়নি দুই বাজারে ৬শ মিটার আরসি ঢালাই। এতেই কাজ সমাপ্ত করে চলে যান ঠিকাদার। এদিকে প্রকৌশল দফতর ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে শতকরা ৯৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে ইতোমধ্যে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজার ৩৮০ টাকা পরিশোধ করেন। ফলে বাকী কাজ সমাপ্ত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে অতিরিক্ত মেয়াদ ২০ শতাংশ আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শেষ হবে। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে এবং ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েও করাতে পারছেন না প্রকৌশল দফতর।  

ফলে এ পথের যাত্রীরা বেশ দুর্ভোগে চলাচল করছে। আরসি ঢালাই না করায় দুই বাজারে যাতাযাতকারীরা প্রায়সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে বিক্রিত পণ্য।  

ওই এলাকার বকুল ও বাবুল মিয়া বলেন, পুরাতন ইট খোয়া উল্টায়ে দিয়ে রোলার করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। যানবাহন চলাচলের ফলে যতটুকু রোলার হয়েছে। এরই উপর একবারই বিটুমিন পাথর দিয়ে তবেই ছোট রোলার দেওয়া হয়। নিম্নমানের ইট ও পুরাতন বিটুমিন মিশ্রিত খোয়া ব্যবহার করায় কাজ শেষ না হতেই বিভিন্ন স্থানে সড়কটি ডেবে গেছে এবং ঢেউ তৈরি হয়েছে।  

চুক্তিপত্রের ঠিকাদার আব্দুল হাকিম বলেন, কাজটি দাউদ আলী সরকারের মাধ্যমে করছি। তবে দাউদ আলী সরদার বলেন, স্থানীয় লোকজন ভালো না। তাই কাজ বন্ধ রেখেছি। চুক্তির সময় যাইহোক নভেম্বর মাস নাগাদ বাকীটুকু করে দেওয়া হবে।  

আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয়রা মাটি সরবরাহ না দিলে ঠিকাদার পাবে কোথায়?। ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে এবং বাকী কাজ সমাপ্ত করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজটি স্টিমেট করতে ভুল হওয়ায় ঠিকাদারের কাছুটা লোকসান হচ্ছে। তাই কাজে গড়িমসি করলেও কাজ বুঝে নিবেন বলেও জানান তিনি।

সদ্য যোগদান করা লালমনিরহাটের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান বাংলানিউজকে জানান, নতুন এসেছেন তাই বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা
নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।