ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা, সচেতন মহলে উদ্বেগ

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
সিলেটে জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা, সচেতন মহলে উদ্বেগ

সিলেট: সিলেটে জুয়াবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এসব অভিযানে বৃদ্ধ-প্রৌঢ়সহ বিভিন্ন বয়সীদের পাশাপাশি অনেক শিশু, কিশোর ও তরুণ আটক হচ্ছে। এতে শিশু-কিশোর-তরুণদেরও জুয়ায় জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসছে। সেজন্য উদ্বেগ-শঙ্কা ছড়িয়েছে সচেতন মহলে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও।

কর্মকর্তারা বলছেন, কী কারণে শিশু, কিশোর ও তরুণরা জুয়া খেলায় জড়িয়ে পড়ছে, সে ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তবে, জুয়া খেলাসহ নানা অপরাধে শিশু-কিশোরদের জড়ানোর জন্য অভিভাবকদের দায়ী করছেন তারা।

শিশু, কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করতে পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষাকে কাজে লাগানোর তাগিদও দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি জুয়া বন্ধে সামাজিক আন্দোলনের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
 
সিলেটে আগে বিভিন্ন ক্লাব এবং হোটেলকেন্দ্রিক বসতো জুয়ার আসর। সেসব আসরে অংশগ্রহণ ছিল সৌখিন জুয়াড়িদের। প্রত্যন্ত অঞ্চলের পেশাদার জুয়াড়িদের নিয়ে নিয়মিত জুয়ার আসর চলতো। কিন্তু হালে জুয়া খেলার ধরন ও খেলুড়ে শ্রেণীতেও পরিবর্তন এসেছে। জুয়া খেলায় এখন বিভোর দেখা যাচ্ছে ছেলে-বুড়ো প্রায় সবাইকে। যেখানে-সেখানে বসছে জুয়ার আসর।
 
এসব জুয়ার আসরে অংশ নেওয়া অধিকাংশই দরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকজন। রাতারাতি টাকাওয়ালা হওয়ার লোভে তারা জড়াচ্ছে জুয়া খেলায়। আর জুয়ার আসরে অংশগ্রহণকারীদের বড় একটি অংশ হচ্ছে শিশু, কিশোর ও তরুণ। ফলে জুয়ার নেশায় নানা অপরাধেও যুক্ত হচ্ছে তারা।  

সম্প্রতি র্যাব-পুলিশের জুয়াবিরোধী জোরদার তৎপরতা এবং অভিযানে কয়েকশ’ জুয়াড়ি ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে অসংখ্য শিশু-কিশোর দেখা যায়।
 
গত ১৮ আগস্ট রাতে নগরীর সোবহানীঘাট ও সুরমা মার্কেট এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব-৯। সেখানকার একটি টান্সপোর্ট এজেন্সিতে বসা জুয়ার আসর থেকে আটক করা হয় ১৩ জুয়াড়িকে। আর সুরমা মার্কেটের বদরুল রেস্টহাউজের জুয়ার আসর থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়। এ দুই অভিযানে ধরা পড়া ২০ জনের মধ্যে শিশু-কিশোরই ছিল ৭ জন, যাদের বয়স ১৭ বছরের মধ্যে। এছাড়া গত তিন মাসে সিলেট মহানগর পুলিশের অভিযানে অন্তত ৩০০ জুয়াড়িকে আটক করা হয়। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই শিশু, কিশোর ও তরুণ।

এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিলং তীর’সহ বিভিন্ন ধরনের জুয়ার বোর্ড থেকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য লোকজনকে আটক করা হচ্ছে। কিন্তু আটকের পর মামলায় কারাগারে পাঠালেও জামিনে বেরিয়ে এসে ফের জুয়া খেলায় মনোনিবেশ করছে তারা। এটাই সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়।
 
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষায় কেবল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে  জুয়া খেলা বন্ধ করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। তাই শিশু-কিশোরদের জুয়া খেলা থেকে বিরত রাখতে অভিভাবক মহলকে সচেতন হতে হবে।  
 
এদিকে, গত সোমবার (১৯ আগস্ট) সাত জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সরকারের ৫২ সদস্যের প্রতিনিধি দল তামাবিল ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে যান।
 
শিলংয়ে দুই দেশের অভিন্ন সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ডিসি-ডিএম সম্মেলন শেষে বুধবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় তামাবিল ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশে ফেরে প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতা জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্মেলনে সীমান্ত এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বন্ধসহ বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে সফল আলোচনা হয়। এরমধ্যে শিলং তীর নামক জুয়া খেলার ভয়াবহতা নিয়েও আলোচনা হয়। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দুই পক্ষই একসঙ্গে কাজ করার প্রয়াস ব্যক্ত করেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
এনইউ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।