ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

তাহলে গেল কোথায় ট্যাক্সিক্যাবটি?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
তাহলে গেল কোথায় ট্যাক্সিক্যাবটি?

সাভার (ঢাকা): এখন অব্দি খোঁজ মেলেনি সাভারের সালেহপুর ব্রিজ থেকে পড়ে তুরাগ নদে ডুবে যাওয়া হলুদ রঙের ট্যাক্সি ক্যাব ও চালক জিয়াউর রহমান জিয়ার (৪০)। দেখতে দেখতে এ দুর্ঘটনার ৩১ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। নিখোঁজের স্বজন, স্থানীয় জনগণ ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া সংশ্লিষ্ট সবার মনে প্রশ্ন একটাই ‘তাহলে গেল কোথায় ট্যাক্সিক্যাবটি?’

জানা যায়, নিখোঁজের দিন ২১ জুলাই থেকে টানা ১৬ দিন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-বাহিনীর ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। পরে নৌ-বাহিনী ‘সাইট টোনার স্ক্যানার’ (পানির তলদেশ দেখার মতো যন্ত্র) ব্যবহার করে তুরাগ নদের প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে স্ক্যান করে কোনো সন্ধান না পেয়ে গত ৬ আগস্ট অভিযান বন্ধ করে দেয়।

ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের আরেক ট্যাক্সিক্যাবের চালক ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, জিয়াউর রহমান জিয়া ফরিদপুরের বোয়ালমারীর আইনাল মোল্লার ছেলে। সেদিন জিয়া ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের ‘এক্সিও ২০১২’ মডেলের ৪২ নম্বর ট্যাক্সিক্যাবটি চালাচ্ছিলেন। ঘটনার সময় সাভার থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন তিনি।  

নিখোঁজ জিয়ার স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা বাংলানিউজকে বলেন, আদৌ কী পাওয়া সম্ভব ট্যাক্সিক্যাবটি। সবাই মিলে এতো খোঁজাখুঁজি করার পরও কেন পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কী আর কখনো পাওয়া যাবে না ট্যাক্সিক্যাবটি? 

নিখোঁজ চালকের মামাতো ভাই জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, এতোদিন পার হয়ে গেল এখন পর্যন্ত জিয়ার সন্ধান বের করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-বাহিনীর উদ্ধার কর্মীরা। নদীর পানি কমলে হয়তো ক্যাবটির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। তবে ততোদিন ভাইয়ের মরদেহ পাবো কী না জানি না।  

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে জিয়া ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের ট্যাক্সিক্যাব চালায়। প্রতি ঈদ নিজের পরিবার ও দুই মেয়ের সঙ্গে উদযাপন করেন। কিন্তু এবার ঈদে জিয়া তার মেয়েদের পাশে নেই। জিয়ার ঘরে এবার ঈদের আনন্দ ছিল না। ছিল শুধু কান্নার আওয়াজ।

ওই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জসিম বাংলানিউজকে বলেন, আমি কাজ শেষে রাতে সেই সড়কের পাশ দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। হাঠাৎ একটি ট্যাক্সিক্যাব ঢাকাগামী একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নদীতে পড়ে যায়। এর পরপরই আমি ৯৯৯-এ ফোন দেই।  

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা-৪ জোন (সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই)-এর কমান্ডার আনোয়ারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ২১ জুলাই (রোববার) রাত ৮টার দিকে সালেহপুর ব্রিজে ট্যাক্সিক্যাবটি পড়ে গেছে ৯৯৯-এমন ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে পাঁচ সদস্যের একটি ডুবরি দল দিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। তুরাগ নদে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় উদ্ধার অভিযানে ডুবুরিদের নানাভাবে সমস্যা হচ্ছিল। এভাবেই দীর্ঘ কয়েকঘণ্টা খোঁজাখুঁজি শেষে ট্যাক্সিক্যাবটি পাওয়া না গেলে পরদিন নৌ-বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার অভিযানে আমাদের ডুবুরি দল ‘এঙ্কর’ ফেলে ও নৌ-বাহিনীর ডুবুরি দল ‘সাইট টোনার স্ক্যানার’ দিয়ে স্ক্যান করা হলেও সন্ধান পাওয়া যায়নি ট্যাক্সিক্যাবটির। পরে ট্যাক্সিক্যাব ও তার চালকের সন্ধান না পাওয়ায় ৬ আগস্ট উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি প্রতিদিন পাঠানো হয় সেখানকার পরিস্থিতি জানার জন্য।  

তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ওই ক্যাবটির চালক গাড়ির ভেতরেই আটকা পড়েছেন। পানির মধ্যে গাড়ির গেট খুলে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও ট্যাক্সি ক্যাবটিতে কোনো যাত্রী ছিল কী না তাও আমরা এখনো জানি না। আর সেই ট্যাক্সিক্যাবটি কীভাবে, কোথায় ও কি অবস্থানে রয়েছে সেটিও আমরা বলতে পারছি না।  

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সেদিন বাসের সঙ্গে ওভারটেকিং ও ব্রিজের পাশে ডিভাইডার না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ওই ব্রিজের পাশে সীমানা পিলার দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সব ব্রিজের পাশে সীমানা পিলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।