ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বিমানে যাত্রীসেবার মান উন্নত করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
বিমানে যাত্রীসেবার মান উন্নত করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে গাঙচিল উদ্বোধন করছেন প্রধনামন্ত্রী শেখ হাসিনা, পাশে ককপিটে বসে তিনি/ছবি: পিআইডি

ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যাত্রীসেবার মান আরও উন্নত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হওয়া বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আরও একটি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ 'গাঙচিল’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
 
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনাল থেকে নতুন বোয়িং (৭৮৭-৮) ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ‘গাঙচিল’ এর উদ্বোধন করেন তিনি।


 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আশা করি বিমান সুনামটা অক্ষুণ্ন রাখবে, সুনাম বাড়াবে, যাত্রীসেবার মান উন্নত করবে।
 
উড়োজাহাজগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন,যে জিনিসগুলো আমরা এনে দিচ্ছি, এই প্লেনগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন এটা সবার দায়িত্ব। নিজেরদেশ, নিজস্ব সম্পদ সে কথা মনে রেখে আপনাদের কাজ করতে হবে।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার একটা প্রতীক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন যায় বিমানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে চিনবে, জানবে, সম্মান করতে পারবে।
 
‘বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে সবাইকে বলবো, আপনাদেরও সেই আন্তরিকতা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিচালনা করবেন। ’
 
তিনি বলেন, আজ দেশ যদি উন্নত হয়, অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়, দেশের অগ্রযাত্রা যদি অব্যাহত থাকে সবাই সুন্দর জীবন পাবে, সুখী হয়ে চলতে পারবেন। আর আমাদের লক্ষ্য সেটাই।
 
আগামীতে বিমান ক্রয়ে নিজেদের ব্যাংক থেকে লোন
ভবিষ্যতে বিমান ক্রয়ে নিজেদের ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা শুনেছেন আমরা আগে বিদেশ থেকে টাকা ধার করতাম। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- আমাদেরই, আমাদের ব্যাংক থেকে আমরা নিজেরা লোন দিয়ে প্লেন কিনবো। যাতে আর অন্য জায়গা থেকে টাকা ধার করতে না হয়। আমরা নিজেরাই করবো সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এভাবেই চেষ্টা করছি ও ধাপে ধাপে এগোচ্ছি।
 
আমেরিকায় বিমানের ফ্লাইট চালুর চেষ্টা করা হবে
আমেরিকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালুর চেষ্টা করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকার এখন আমরা যেতে পারছি না, আশা করি সেই সমস্যা সমাধান করতে পারবো শিগগির। এখন আমাদের ড্রিমলাইনার সরাসরি ঢাকা থেকে জেএফকে যাওয়ার মতো সক্ষমতা রাখে। কাজেই আমরা এখন চেষ্টা করছি।
 
‘ধাপে ধাপে পৃথিবীর অন্য দেশে বিমান যাতে যেতে পারে আমরা সে ব্যবস্থা করছি। ’
 
লন্ডনে ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধির প্রচেষ্টার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
 
আরও দুটো কার্গো প্লেন কেনা হবে
আরও দুটো কার্গো প্লেন কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে আমরা আরও প্লেন কিনবো। এর মধ্যে আমি চাচ্ছি আরো দুটো কার্গো প্লেন কিনতে, যাতে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বাড়ে। তার জন্য আলাদা দুটো কার্গো প্লেন আমরা ইতোমধ্যে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
 
বিগত বছরগুলোতে বিমান সেক্টরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নতস্থানে নিতে সক্ষম হয়েছি। বিমানকে আরও উন্নত করা। এদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি। ’
 
শেখ হাসিনা বলেন, সিলেটে ও চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করে দেই। আপনারা ৯৬ সালের আগের ছবিগুলো একটু দেখবেন যে তখন বিমানবন্দর কেমন ছিল। কোনো বোর্ডিং ব্রিজ, কোনো আধুনিক ব্যবস্থাই ছিল না। যেটা আমি সরকারে এসে করে দেই।
 
ককপিটে প্রধনামন্ত্রী শেখ হাসিনাকক্সবাজারে আন্তজার্তিক বিমানবন্দর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন আরেকটা বিমানবন্দর করে দিচ্ছি আমরা কক্সবাজারে। ইন্টারন্যাশনাল এয়াররুটে এটা পড়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উড়োজাহাজ সেখানে আসতে পারবে, রিফুয়েলিং করতে পারবে।
 
‘তাছাড়া কক্সবাজার একটা ট্যুরিস্ট স্পট। পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সমুদ্র সৈকত এখানে। এত লম্বা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যেটা আমাদের আছে। যেটাকে আমরা সেভাবে ফোকাস করতে পারিনি বা কাজে লাগাতে পারিনি। সেটা আমাদের করতে হবে। ’
 
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মহিবুল হক, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) মোহাম্মদ ইনামুল বারী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার।
 
এর আগে বিমানবন্দরে পৌঁছে নতুন উড়োজাহাজটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

উদ্বোধন করেই প্রধানমন্ত্রী উড়োজাহাজটিতে আরোহণ করেন এবং ককপিটসহ বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় উদ্বোধনী ফ্লাইটে আবুধাবির উদ্দেশে আকাশে ডানা মেলবে ‘গাঙচিল’।

গত ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল থেকে দেশে আসে ‘গাঙচিল’।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দে উড়োজাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে ‘গাঙচিল’।  

‘গাঙচিল’ যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়ালো তিনটিতে।
 
২০০৮ সালে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার জন্য ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করে বিমানবাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
 
১০টি বিমানের নাম- পালকি, অরুণ আলো, আকাশ প্রদীপ, রাঙা প্রভাত, মেঘদূত, ময়ূরপঙ্খী, আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস।

আগামী সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আসতে পারে চতুর্থ ড্রিমলাইনার ‘রাজহংস’।

প্রতিটি উড়োজাহাজর নামই দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার একটানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে পারে। অন্য উড়োজাহাজের চেয়ে এর জ্বালানি খরচও ২০ শতাংশ কম।

ড্রিমলাইনার গাঙচিলের ২৭১টি আসনের মধ্যে ২৪টি বিজনেস ক্লাস এবং ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাসের আসন। বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত রিক্লাইন্ড ও সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড সুবিধা রয়েছে।

অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা নিতে পারবেন যাত্রীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।